শরীফুল কেন নেই, পারভেজ কেন আছেন
Published: 12th, January 2025 GMT
শুধু লিটন দাসই নন, চ্যাম্পিয়নস ট্রফির বাংলাদেশ দল থেকে বাদ পড়েছেন শরীফুল ইসলাম।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে লিটন দাসের না থাকা অবশ্যই বড় খবর। যে কারণে এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে নিয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেনকে।
প্রধান নির্বাচককে কথা বলতে হয়েছে বাঁহাতি পেসার শরীফুল ইসলামের বাদ পড়া নিয়েও। একইভাবে আলোচনায় এসেছে খুব একটা ছন্দে না থাকার পরও পারভেজ হোসেনের ওপর আস্থা রাখার কারণও।
২৩ বছর বয়সী শরীফুল বেশ কিছুদিন ধরে ছন্দে নেই। বাঁহাতি এই পেসার গত তিন মাসে বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণেই খেলেছেন। কিন্তু সর্বশেষ ৬ ম্যাচে নিতে পেরেছেন মাত্র ৩ উইকেট।
গত বছর জুলাইয়ে কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি লিগে খেলার সময় থেকে চোট বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন শরীফুল। কুঁচকির চোটের কারণে আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে পারেননি। ডিসেম্বরে এনসিএল টি-টোয়েন্টিতেও খেলেননি। বিপিএল দিয়ে মাঠে ফিরলেও ভালো করতে পারছেন না শরীফুল। চিটাগং কিংসের হয়ে এখন পর্যন্ত ৩ ম্যাচে নিয়েছেন ২ উইকেট; বল হাতে বেশ খরুচেও ছিলেন।
সব মিলিয়ে প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফের মনে হয়েছে শরীফুল এ মুহূর্তে ছন্দে নেই, ‘তিনি (শরীফুল) কানাডা থেকে একটা চোট নিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন প্রোগ্রামের পর আবার দলে এসেছেন। তবে আমাদের মনে হয়েছে সেরা অবস্থায় নেই। তাই তাঁকে পেতে আরেকটু সময় অপেক্ষা করতে হবে।’
শরীফুল না থাকলেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা করে নিয়েছেন চিটাগং কিংসে খেলা পারভেজ। ২২ বছর বয়সী এই ওপেনার বাংলাদেশের হয়ে ৭টি টি-টোয়েন্টি খেললেও এখনো ওয়ানডে অভিষেক হয়নি।
গত ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে দলে প্রথমবারের মতো ডাক পান পারভেজ। কিন্তু কোনো ম্যাচেই তাঁকে একাদশে রাখা হয়নি। বিপিএলেও এখন পর্যন্ত তাঁর ব্যাট হাসেনি। চিটাগং কিংসের হয়ে প্রথম ৩ ম্যাচে তাঁর অবদান ১৩, ০ ও ১৭।
ছন্দে না থাকার পরও অনভিষিক্ত একজন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে জায়গা পেয়েছেন, সেটি গাজী আশরাফও মানছেন। তবে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং-সামর্থ্যের কারণেই পারভেজকে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির দলে রাখা হয়েছে বলে জানান প্রধান নির্বাচক, ‘তাঁর (পারভেজের) হয়তো বড় ধরনের কোনো অবদান নেই। তবে আমাদের যেটা মনে হয়েছে, আমরা যেটা খুঁজছি, তা হলো পাওয়ার প্লেতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং।’
পারভেজকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে কেন খেলানো হয়নি—এর ব্যাখ্যায় গাজী আশরাফ বলেছেন, ‘নির্বাচক কমিটি সাধারণত এসবে (কাকে খেলাবে) হস্তক্ষেপ করে না। কোচ ও অধিনায়ক মূলত সিদ্ধান্ত নেন। কখনো কখনো আমরা আলোচনায় নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড়কে নিয়ে আলোচনা করি। তানজিদের যে অ্যাপ্রোচ, সেটার সঙ্গে মিল রেখে একজনকে খুঁজেছি। তাই আমরা নতুন একজনকে (পারভেজকে) সুযোগ দিয়েছি।’
লিটন বাদ পড়ায় পারভেজকে যে আসলে বিকল্প ওপেনার হিসেবে নেওয়া হয়েছে, সেই ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন বাংলাদেশের অভিষেক ওয়ানডের অধিনায়ক গাজী আশরাফ, ‘বিকল্প কাউকে লাগলে তিনি তানজিদ-সৌম্যর মতো একই গতিতে খেলতে পারবেন। দলকে জেতাতে মূল লক্ষ্য ঠিক রাখতে তিনি সব সময় আক্রমণাত্মক থাকেন। এটা একটা বড় বিবেচনার বিষয়। সামনে হয়তো তিনি অবদান রাখতে পারবেন। তাই বড় টুর্নামেন্টে তাঁকে নেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশ দলের চ্যাম্পিয়নস ট্রফি অভিযান শুরু হবে ২০ ফেব্রুয়ারি দুবাইয়ে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন চায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণ অধিকার পরিষদ। আজ বুধবার বিকেল সোয়া চারটায় গণ অধিকার পরিষদের সঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বৈঠক শেষে পৃথক বক্তব্যে এ বিষয়ে মতৈক্যের কথা জানান দল দুটির শীর্ষ নেতারা।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুত সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদ তাদের সঙ্গে একমত হয়েছে।
আরও কয়েকটি বিষয়ে দুই দল একমত হয়েছে বলে জানান মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে নারীর অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশনের ‘ইসলাম ধর্মবিরোধী’ প্রস্তাব বাতিল, গণহত্যা, খুনসহ টাকা পাচারকারীদের দ্রুত সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা, ফ্যাসিবাদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ঠেকাতে আধিপত্য ও সাম্রাজ্যবাদমুক্ত একটি ইসলামী কল্যাণরাষ্ট্র গঠন এবং সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের আয়োজন ইত্যাদি।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ‘গত ৫৩ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল, তাদের মাধ্যমে দেশে কোনো সুন্দর রাজনৈতিক ধারা প্রতিষ্ঠা পায়নি। পেশিশক্তি প্রয়োগ করে নির্বাচনের মাধ্যমে অযোগ্য লোকজন ক্ষমতায় বসে দেশকে বিভিন্ন কায়দায় অশান্ত করেছিল। সে জন্য আমরা পিআর (সংখ্যানুপাতিক) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে একমত হয়েছি।’
এ সময় গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক বলেন, কিছু মৌলিক সংস্কার না হলে দেশে আবার স্বৈরাচার, ফ্যাসিস্ট সৃষ্টিসহ নানা ধরনের সংকট তৈরি হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে নির্মম গণহত্যা পরিচালনাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাচ্ছি। তাদের রাজনীতিও এ দেশে হওয়া উচিত নয়। তাদের বিচারের বিষয়ে গতি আনার ক্ষেত্রে (ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে) একমত হয়েছি।’
সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও গণ অধিকার পরিষদ অনেক আগে থেকেই একমত বলে জানান নুরুল হক। তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আমলে অনুষ্ঠিত স্থানীয় নির্বাচনে ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যাঁরা জনপ্রতিনিধি হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও নির্বাচন বাতিল করা দরকার।
নুরুল হক বলেন, ‘গত আট মাসে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি না থাকায় সেবা পেতে মানুষ ব্যাপক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কিছু মানুষ জোর করে আধিপত্য বিস্তার করছে। সে জন্য স্থানীয় নির্বাচন মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দিতে পারে। জাতীয় নির্বাচনের আগে সংস্কারে কিছু সময়ের প্রয়োজন। আবার জাতীয় ঐকমত্যেরও প্রয়োজন। অন্তত তার আগে স্থানীয় নির্বাচন হতে পারে।’
গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি বলেন, ভৌগোলিক কারণে বিদেশি আগ্রাসন যাতে এ দেশের রাজনীতির কলকাঠি নাড়াতে না পারে, সে জন্য আধিপত্যবাদমুক্ত কল্যাণরাষ্ট্র তৈরির বিষয়ে বৈঠকে মতৈক্য হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি এমন রাষ্ট্র হবে, যেখানে ইসলামী আদর্শবিরোধী কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করা হবে না।’
এর আগে বেলা তিনটায় রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন দুই দলের নেতারা। বৈঠকে গণ অধিকার পরিষদের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের মুখপাত্র ফারুক হাসান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন, উচ্চতর পরিষদের সভাপতি হাসিবুর রহমান, আইনজীবী নুরে এরশাদ ও সাকিব হোসেন।
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন দলটির মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমাদ, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আহমাদ আব্দুল কাইউম প্রমুখ।