মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় মেঘনা নদীতে স্পিডবোট ও কাঠের নৌকার মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শনিবার রাত ৯টার দিকে অজ্ঞাত স্পিডবোটের চালককে আসামি করে গজারিয়া থানায় মামলাটি করেন নিহত অদুদ ব্যাপারীর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী।

মামলার বিষয়টি আজ রোববার সকালে প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আনোয়ার আলম আজাদ। তিনি বলেন, নিহত অদুদ ব্যাপারী ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকায় ছিলেন। তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ, ওদুদসহ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিরা রাতের আধারে নৌকায় করে মেঘনা নদী পার হচ্ছিলেন। সে সময় স্পিডবোট তাঁদের নৌকায় উঠে যায়। এতে কাঠের নৌকার চার যাত্রী মারা যান। ওই স্পিডবোটের অজ্ঞাত চালককে আসামি করে মামলাটি করা হয়।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি রাতে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নে মেঘনা নদী থেকে নয়ন ও পিয়াসের লোকজন খননযন্ত্র দিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে আসছিলেন। বালু উত্তোলনের সময় তাঁরা নিজস্ব কয়েকটি স্পিডবোট ও কাঠের ইঞ্জিনচালিত নৌকা দিয়ে মেঘনা নদীর বিভিন্ন অংশে মহড়া দেন। গত শুক্রবার রাতে দুর্ঘটনাকবলিত স্পিডবোট ও নৌকাটি বালুমহালের অবৈধ বালু উত্তোলনে মহড়া ও বালু নিতে আসা বাল্কহেডগুলো নিয়ন্ত্রণের কাজ করছিল। রাতে অন্ধকার ও কুয়াশার কারণে স্পিডবোট ও ট্রলার একটি অন্যটিকে দেখতে না পাওয়ার কারণে সংঘর্ষ হয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা সংঘর্ষের শব্দ পেয়ে ঘটনাস্থলে থেকে হতাহতদের উদ্ধার করে গজারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান।

দুর্ঘটনার পরপরই পিয়াসের বড় ভাই গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের অদুদ ব্যাপারী (৩৫), মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার চর ঝাপটা এলাকার মো.

বাবুল (৪৮) এবং একই উপজেলার আধারা ইউনিয়নের জাজিরা এলাকার মাহমুদ গাজীর (৩৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে মো. নাঈমের (২৫) নামের আরও একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া আবদুল হালীম (৩৪) নামের গুরুতর আহত একজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

গজারিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় যাঁরা হতাহত হয়েছেন, তাঁরা সবাই অবৈধভাবে মেঘনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঘটনার সময় তাঁরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে বাল্কহেডের মাধ্যমে বিক্রির কাজে সহযোগিতা করছিলেন। নিহত অদুদ ব্যাপারী বিরুদ্ধে গজারিয়া থানায় মাদক, মারামারি, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ঘটনায় ১০টি মামলা আছে। কয়েকটি মামলার পরোয়ানাভুক্ত আসামি ছিলেন তিনি। এ ছাড়া নিহত মো. বাবুল পাঁচটি মামলার আসামি ছিলেন।

আরও পড়ুনমেঘনা নদীতে দুই স্পিডবোটের সংঘর্ষে নিহত ৩১১ জানুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনমেঘনায় নৌ দুর্ঘটনায় নিখোঁজ যুবকের লাশ উদ্ধার, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪১৬ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম

উনি তো বাংলাদেশের অমিতাভ বচ্চন, শোবিজ অঙ্গনে এ বাক্যটি প্রায়ই শোনা যায় তাঁর সহকর্মীদের মুখে। কেবল অমিতাভদের মতো করে কাজে লাগানো হয়নি। তাঁকে কেন্দ্র করে গল্প ভাবলে, গল্পের মূল শক্তিতে যদি তাঁকে রাখা হয়, তাহলে দারুণ কিছু পেতে পারত ঢাকার সিনেমা কিংবা নাটকের ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু ক’জন ভাবে এটা। অধিকাংশের ভাবনায় কেবল ট্রেন্ডি কনটেন্ট। ভাইরাল শিল্পী। ফলে ঢাকার শোবিজে দাপুটে অভিনেতা হয়েও অমিতাভ কিংবা রজনীকান্তদের মতো প্রভাব নিয়ে পর্দায় হাজির হতে পারছেন না। তিনি তারিক আনাম খান।  

ব্যক্তিজীবনে যিনি সৌম্য, শান্ত, ধীরস্থির প্রকৃতির একজন মানুষ। অভিনয়ে প্রথাগত নন। আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য নিয়েই চলমান। তারিক আনামের সঙ্গে যারা মেশেন বা যারা তাঁকে জানেন তারা কায়মনোবাক্যে স্বীকার করবেন তিনি বলেন কম, শোনেন বেশি। শোঅফ কম, করেন বেশি। 

সদা গম্ভীর প্রকৃতির একজন মানুষ হয়েও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রায় প্রতিটি অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন নিজের অভিনয় সৌকর্য ও সাংগঠনিক দূরদর্শিতা দিয়ে। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে মঞ্চের আলোয় আলোকিত তিনি। গ্রুপ থিয়েটারের অন্যতম দল নাট্যকেন্দ্রের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত হয়ে উঠলেও নিজের ভেতর বিন্দুমাত্র অহমিকা নেই। নেই ‘অনেক কিছু করেছি টাইপ’ দৃষ্টিভঙ্গি।

নতুন বছর প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল তারেক আনাম খান অভিনীত ‘মেকআপ’ সিনেমাটি। বহু আগে শুটিং হওয়া এ সিনেমাটি বারবার সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েছিল। মূলত দেশের শোবিজ অঙ্গনের খুঁটিনাটি বিষয় ও সম্পর্কের বিষয়গুলো চিত্রায়ণ করায় এই নিষেধাজ্ঞা। এই সিনেমায় একজন সুপারস্টার নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন তারিক আনাম খান। সিনেমাটি ব্যবসা করতে পারেনি। পারছে আলোচনায় আসতে। যেটা পেরেছে সেটা তারিক আনাম খানকে নতুন করে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে। যে তারিক আনাম খানদের এই সময়ের নির্মাতারা এড়িয়ে চলেন, কিংবা শুধু বাবার চরিত্রের জন্যই কাস্ট করেন, তাদের নতুন করে ভাবনার খোরাক জুগিয়েছেন। এই ছবিতে তারিক আনাম খান সত্যি সত্যিই দেখিয়েছেন বয়স একটা সংখ্যামাত্র। তাঁকে নিয়ে বহুমাত্রিক চিন্তা করার সময় এখন। তবে সেই চিন্তা কতটা প্রসারিত হবে, তা অজানা। যদিও অভিনেতা অনেকটা কৌতুকের সুরেই বিষয়টি সবাইকে বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেন, এখন তো সব সিনেমায় বাবা চরিত্রেই অভিনয় করছি। আমি তো জাতীয় বাবা হয়ে গেছি। এর থেকে মুক্তি চাই।’

 তাঁর মতে, সিনিয়র শিল্পীদের চরিত্র নিয়ে নির্মাতাদের আলাদা করে ভাবা উচিত। যেখানে বলিউডে সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে আলাদা গল্প বলা হয়। কিন্তু আমাদের এখানে এটা হয় কী? আমাদের নিয়ে নতুন নতুন ভাবনার গল্প তৈরির লোক কই? কথাগুলো বলার সময় এক ধরনের আক্ষেপ ছিল বরেণ্য এই অভিনেতার। ছিল অতৃপ্তিও। তাই কথা বলতে বলতে ফিরে যাওয়া হয় অতীত স্মৃতিতে। যে স্মৃতি বর্ণিল, রঙ্গিন। যাকে সবাই সোনালি দিন বলেই সম্বোধন করেন। সেই সোনালি দিনগুলোর কথা কতটা মনে তারিক আনাম খানের? জানালেন, তিনি আসলে অতীত রোমন্থন করে তাতে মুগ্ধ থাকার মানুষ নন। বলেন, আমি অতীত মগ্ন মানুষ নই। স্মৃতি রোমন্থন করারও মানুষ নই। আমি মনে করি, বর্তমান সময়টাই সত্য।’ 

তারপরও অতীতের কাজের পদ্ধতি নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেতা। কথা বলতে বলতেই উঠে এলো সব। বললেন, তখনকার সময়ের কথা যদি বলি তখন ভালো ছিল এই যে, স্ক্রিপটা নিয়ে নাট্যনির্দেশকরা অনেক আগে থেকে চিন্তাভাবনা করতেন। কমপক্ষে চারদিন নাটকের রিহার্সেল হতো। একটানা তিন ক্যামেরায় কাজ হতো, আর্টিস্ট অংশগ্রহণ করত। আমি এখন যদি এই একই ঢঙে নাটক নির্মাণ করি, তাহলে দর্শক গ্রহণ নাও করতে পারে। ওই সময় এবং এ সময়ের তুলনামূলক বিশ্লেষণ যদি করি, দেখা যাবে তখন সিরিয়াসনেসটা বেশি ছিল। হোমওয়ার্ক বেশি হতো। কোয়ালিটিও ছিল এবং ভালো কাজের যথেষ্ট সুযোগও ছিল। কোয়ালিটি কিন্তু আপেক্ষিক বিষয়।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লির মৃত্যু 
  • গায়িকা-অভিনেত্রী মারিয়ান ফেইথফুল আর নেই
  • সাইফুল-সাজ্জাদে তটস্থ চট্টগ্রামের ৫ থানার পুলিশ
  • কামরুল হাসানের কাছে শিল্প ধরা দিয়েছিল
  • ‘আমার চিত্রকর সত্তার মৃত্যু ঘটিয়েছি’
  • ‘রেখাচিত্রকে অবহেলা করা উচিত নয়’
  • অনুষ্ঠানে প্রবেশে নারী সাংবাদিককে ‘বাধা’, যা হয়েছিল সেদিন
  • যুক্তরাষ্ট্রে উড়োজাহাজ-হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় বেঁচে নেই কেউ
  • জামালপুরে ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজির ৫ যাত্রী নিহত
  • আমি এসব থেকে মুক্তি চাই: তারিক আনাম