চট্টগ্রামের চন্দনাইশে সন্ত্রাসীদের হাতে অপহৃত এক কাঠুরিয়া ও চার শ্রমিক মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেল ও রাতে তাঁদের মুক্তি দেন অপহরণকারী ব্যক্তিরা।

মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া শ্রমিকেরা হলেন কাঠুরিয়ার আহমদ হোসেন (৫৫), কৃষিশ্রমিক মো. রহিম (৩৫), বদিউল আলম (৩০), মো. কামাল (৪০) ও মো. জুনায়েদ (৪৫)।

গতকাল সকালে কাঞ্চননগরের পাহাড় থেকে কাঠুরিয়া আহমদ হোসেনকে এবং দুপুরে হাশিমপুরের পাহাড়ি এলাকা থেকে অপর চার শ্রমিককে অপহরণ করা হয়। অপহরণকারী ব্যক্তিরা পাহাড়ি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।

কাঠুরিয়া আহমদ হোসেন ৫০ হাজার টাকা দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেন জোয়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিন আহমদ চৌধুরী। অপহৃত বাকি ৪ কৃষক ৬০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পান বলে জানান উপজেলার হাসিমপুর ইউনিয়নের সৈয়দাবাদ গ্রামের বাসিন্দা ও বাগানমালিক নুরুন্নবী সওদাগর।

জোয়ারা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আমিন আহমদ চৌধুরী বলেন, গতকাল সকালে আহমদ হোসেনসহ দুজন কাঠুরিয়া কাঞ্চননগরের পাহাড়ে কাঠ কাটতে যান। এ সময় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাঁদের ধাওয়া দেন। সন্ত্রাসীরা আহমদ হোসেনকে নিয়ে গেলেও তাঁর সঙ্গী অপর কাঠুরিয়া মুন্সি মিয়া পালিয়ে আসেন। পরে সন্ত্রাসীরা আহমদ হোসেনকে মারধর করে মুঠোফোনে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরিবারের সদস্যরা অনেক কষ্টে ৫০ হাজার টাকা জোগাড় করে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের দিয়ে আহমদ হোসেনকে মুক্ত করে আনেন।

অপর চার শ্রমিকও মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন বলে দাবি করেন সৈয়দাবাদ গ্রামের বাগানমালিক নুরুন্নবী সওদাগর। মুঠোফোনে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ১০ জন শ্রমিক গতকাল বেলা ৩টার দিকে হাসিমপুর পাহাড়ি এলাকায় তাঁর পেয়ারা ও লেবুর বাগান পরিষ্কার করতে যান। এই সময় পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা তাঁদের ধরতে গেলে ছয়জন শ্রমিক পালিয়ে আসেন। বাকি চার শ্রমিককে তাঁরা অপহরণ করে নিয়ে যান। পালিয়ে আসা শ্রমিকেরা জানিয়েছেন, অপহরণকারী ব্যক্তিরা পাহাড়ি উপজাতীয় সন্ত্রাসী। তাঁদের বয়স ২০ থেকে ৩০ বছর হবে। শ্রমিকদের একজনের মুঠোফোন থেকে সন্ত্রাসীরা ফোন করে বাগানমালিক নুরুন্নবীর কাছে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এ সময় একজনের মাধ্যমে তিনি ৬০ হাজার টাকা পাঠানোর পর শ্রমিকদের রাত ১১টায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইমরান আল হোসাইন বলেন, ‘শুনেছি পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা গতকাল সকালে এক কাঠুরিয়াকে অপহরণ নিয়ে গেছে। পরে আবার তাকে বিকেলে ছেড়ে দিয়েছে। একই সঙ্গে বিকেলের দিকে আরও চারজন কৃষককে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। তাদেরও রাত ১১টার দিকে ছেড়ে দিয়েছে। তবে মুক্তিপণের বিষয়ে জানি না। এ ব্যাপারে থানায় কেউ অভিযোগও করেনি।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

উদ্ধার অভিযানে মিলল ‘ইউপিডিএফের আস্তানা’

খাগড়াছড়িতে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ ছয় দিনেও মেলেনি। তাদের উদ্ধারে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল সোমবারের অভিযানে পাহাড়ের আঞ্চলিক দল ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) গোপন আস্তানা পাওয়ার দাবি করেছে যৌথ বাহিনী।

জানা গেছে, গতকাল ভোর ৫টার দিকে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের পূর্ণচন্দ্র কারবারি পাড়ায় যৌথ বাহিনী অভিযান চলায়। এ সময় যৌথ বাহিনীর সদস্যরা টিনশেডের তালাবদ্ধ একটি ঘর দেখতে পান। এর পর স্থানীয় লোকজনের সাহায্যে তালা ভেঙে ঘরটিতে ঢুকে তল্লাশি চালানো হয়। এ সময় তিন জোড়া পোশাক ও ১৯টি ইউনিফর্ম, পিস্তলের গুলি, ১টি ল্যাপটপ, ওয়াকিটকি সেট, দুটি মোবাইল ফোন, একটি মাইক্রোফোন, একটি ক্যামেরা, একটি প্রিন্টার, সেলাই মেশিন, তাঁবু, নেট, লোহার শেকল, খাবারের তৈজসপত্র ও খাবারের কাঁচামাল, চাঁদা আদায়ের রসিদসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। তবে ওই আস্তানায় অপহরণের শিকার শিক্ষার্থীদের রাখা হয়েছিল কিনা, তা জানা যায়নি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ মো. আমান হাসান। 

অভিযানের বিষয়ে খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার আরেফিন জুয়েল বলেন, যৌথ বাহিনীর অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল ভোরে ভাইবোনছড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় পূর্ণচন্দ্র কার্বারি পাড়ার একটি ঘর থেকে ইউপিডিএফের গোপন আস্তানার সন্ধান পায় যৌথবাহিনী। সেখান থেকে ইউপিডিএফের প্রশিক্ষণ সরঞ্জামসহ ল্যাপটপ, মোবাইল, ওয়াকিটকি উদ্ধার করা হয়। তবে কাউকে আটক করা যায়নি। পাঁচ শিক্ষার্থীকে এখনও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিজু উৎসব উদ্‌যাপন শেষে ফেরার পথে গত ১৬ এপ্রিল সকালে খাগড়াছড়ির গিরিফুল এলাকা থেকে পাঁচ শিক্ষার্থী ও তাদের বহন করা অটোরিকশার চালককে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহৃত শিক্ষার্থীরা হলেন– রিশন চাকমা, মৈত্রীময় চাকমা, অলড্রিন ত্রিপুরা, দিব্যি চাকমা ও লংঙি ম্রো। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পাঁচ শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি। এ ঘটনায় ইউপিডিএফকে দায়ী করেছে চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস-সন্তু লারমা) সমর্থিত পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইউপিডিএফের জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ দিন পর মুক্তি পেলেন বান্দরবানে অপহৃত নির্মাণশ্রমিক
  • পাহাড়ে অপহরণের আলোচিত যত ঘটনা
  • এক সপ্তাহেও উদ্ধার হয়নি চবির অপহৃত ৫ শিক্ষার্থী
  • অপহরণের ছয় দিন পর টেকনাফের পাহাড় থেকে সিলেটের ৬ বাসিন্দাকে উদ্ধার
  • মালয়েশিয়া পাচারের উদ্দেশ্যে অপহরণ, টেকনাফের পাহাড় থেকে উদ্ধার সেই ৬ শ্রমিক
  • সিলেটের নিখোঁজ ছয় শ্রমিকের লোকেশন টেকনাফ: পুলিশ
  • শরীরে ছ্যাঁকা দিয়ে হাতের নখ উপড়ে প্রতিবন্ধী বানিয়ে করানো হতো ভিক্ষা
  • উদ্ধার অভিযানে মিলল ‘ইউপিডিএফের আস্তানা’
  • টেকনাফে অপহরণকারী- যৌথবাহিনী গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১
  • টেকনাফে অপহরণকারীদের সঙ্গে যৌথবাহিনীর গোলাগুলি, গুলিবিদ্ধ ১