সংরক্ষিত বনের মধ্যে নির্মাণ করা হয়েছে রেলপথ। কাটা পড়ে কয়েক লাখ গাছ। রেলপথ বসানোর জন্য একের পর এক পাহাড় কেটে সমতল করা হয়। এর ফলে বিপন্নপ্রায় এশিয়ান হাতি চলাচলের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে।

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে গিয়ে পদে পদে পরিবেশের ক্ষতি করা হয়। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পের তালিকায় থাকায় বন বিভাগ কিংবা পরিবেশ অধিদপ্তর কেউ-ই প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধা দেয়নি। উল্টো সংরক্ষিত বনের তালিকা থেকে প্রকল্প এলাকাকে বাদ দেওয়া হয়। অবশ্য প্রকল্পের কাজ করার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণে চারটি শর্ত বেঁধে দিয়েছিল বন বিভাগ। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কাজ প্রায় শেষ করলেও শর্তগুলো পুরোপুরি প্রতিপালন করেনি।

শর্ত না মেনে কাজ শেষ করায় বিপন্নপ্রায় হাতি চলাচলে ঝুঁকি রয়ে গেছে। ইতিমধ্যে ট্রেনের ধাক্কায় একটি বাচ্চা হাতি মারা গেছে। খাড়াভাবে কাটার কারণে ভারী বর্ষণে পাহাড়ধসের ঘটনাও ঘটছে। এতে ট্রেন চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ‘চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য চারটি শর্তে সংরক্ষিত বনকে ‘ডি রিজার্ভ’ (সংরক্ষিত তালিকা থেকে বাদ) ঘোষণা করে ২০১৯ সালের ৬ জুন প্রজ্ঞাপন জারি করে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। নির্মাণকাজ শেষে ২০২৩ সালের ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।

এ প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হবে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ।

শর্ত মানেনি রেল, চিঠি বনের

চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথের ২৭ কিলোমিটার গেছে সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে। লোহাগাড়ার চুনতি, ফাঁসিয়াখালী ও মেধাকচ্ছপিয়া সংরক্ষিত বনের ভেতর দিয়ে এই রেলপথ গেছে। রেললাইন নির্মাণ করার জন্য বনের ২০৭ একর জায়গাকে সংরক্ষিত বন থেকে বাদ দেওয়া হয়।

পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চারটি শর্ত হচ্ছে: ১.

বরাদ্দ দেওয়া বনভূমিতে বিদ্যমান গাছপালার মূল্য বাবদ ১০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা পরিশোধ করবে রেল। ২. পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতিপূরণের জন্য যে পরিমাণ গাছের ক্ষতি হবে, তার তিন গুণ গাছ লাগাতে হবে বন অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে রেললাইনের দুই পাশে। আগামী ১০ বছর তা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। ৩. বন্য হাতিসহ সব বন্য প্রাণীর নিরাপদ চলাচলের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ওভারপাস ও আন্ডারপাস নির্মাণ করতে হবে। ৪. রেলগাড়ির শব্দে বনাঞ্চলে থাকা বন্য প্রাণীর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট অংশ রেলওয়েকে সাউন্ড ব্যারিয়ার বা শব্দ প্রতিবন্ধকতা নির্মাণ করতে হবে।

এসব শর্তের সূত্র ধরে একটি সমঝোতা স্মারক চুক্তি হয়। বনায়ন এবং বন্য প্রাণীর আবাসস্থল সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ১৬টি শর্ত নির্ধারণ করে দেওয়া হয় চুক্তিতে।

তবে এসব শর্ত ও সমঝোতা চুক্তি রেলওয়ে যথাযথ বাস্তবায়ন করেনি উল্লেখ করে গত ১৭ অক্টোবর রেলওয়ের প্রকল্প পরিচালককে চিঠি দিয়েছেন তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী। চিঠিতে বলা হয়, বন্য হাতিসহ সব বন্য প্রাণীর চলাচলের জন্য ২টি ওভারপাস ও ২টি আন্ডারপাস নির্মাণ করার কথা থাকলেও বাস্তবে একটি ওভারপাস নির্মাণ করা হয়েছে। দুটি আন্ডারপাস করা হলেও তা ঠিকভাবে নির্মাণ করা হয়নি। একটি আন্ডারপাস দিয়ে হাতি চলাচল করতে পারে না। এ ছাড়া সাউন্ড ব্যারিয়ার নির্মাণ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

এদিকে রেললাইন করতে গিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ২ লাখ ৩৯ হাজার গাছ কাটা হয়। প্রজ্ঞাপনের শর্ত অনুযায়ী, তিন গুণ গাছ রোপণ করার কথা। অর্থাৎ রোপণ করা গাছের পরিমাণ হওয়ার কথা ৭ লাখ ২০ হাজার। কিন্তু এখন পর্যন্ত বন বিভাগের হিসাবে গাছ লাগানো হয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার। আবার যে ধরনের গাছ লাগানো হয়েছে, তা নিয়ে বন বিভাগের আপত্তি রয়েছে।

প্রজ্ঞাপন ও সমঝোতা চুক্তির শর্ত না মানার বিষয়ে জানতে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মো. সবুক্তগীনের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। নগরের সিআরবিতে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে তাঁর কার্যালয়ে অন্তত চার দফা গিয়ে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সভায় ব্যস্ত আছেন বলে জানান।

ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয় হাতিটির। গত ১১ ডিসেম্বর চুনতি বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যে

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা জেলার ১৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ

খুলনা জেলার ১৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৮৮১ সালের ২৫ এপ্রিল খুলনাকে জেলার মর্যাদা দেওয়া হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রামের পরে বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শিল্প ও বন্দরনগরী ঐতিহ্যবাহী খুলনা। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রূপসা ও ভৈরব নদীর তীরে এর অবস্থান। 

নদ-নদী বিধৌত হযরত খানজাহান আলীর (রহ.) স্মৃতি বিজড়িত সুন্দরবনের কোল ঘেঁষা অপরূপ এ জেলাটি লম্বা আকৃতির ও চৌকা ধরনের। দেশের প্রাচীনতম নদী বন্দরগুলোর মধ্যে খুলনা অন্যতম।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠার ১৪৪তম বার্ষিকী উপলক্ষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করেছে বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বর্নাঢ্য শোভাযাত্রা, স্মরণিকা প্রকাশ, খুলনা মেজবানী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালা আজ শিববাড়ির মোড়ে আয়োজিত সমাবেশ উদ্বোধনের পর নগরীতে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হবে।

খুলনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস থেকে জানা যায়, ৪ হাজার ৬৩০ বর্গমাইল এলাকা, ৪৩ হাজার ৫০০ জনসংখ্যা অধ্যুষিত খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরাকে নিয়ে ১৮৮২ সালের ২৫ এপ্রিল গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর আগে খুলনা ছিল যশোর জেলার মহকুমা।

ঢাকা/নুরুজ্জামান/টিপু

সম্পর্কিত নিবন্ধ