মালিকানায় বদল ও নারীর বেশি অংশগ্রহণ চায় গ্রামীণ ব্যাংক
Published: 12th, January 2025 GMT
গ্রামীণ ব্যাংকের মালিকানায় সরকারের অংশ ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বাকি ৭৫ শতাংশ মালিকানা ঋণগ্রহীতাদের।
গ্রামীণ ব্যাংকই মালিকানায় সরকারের অংশ কমানোর প্রস্তাবটি দিয়েছে। সরকারের হাতে পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ যে তিনজন পরিচালক নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে তা–ও কমিয়ে আনতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। গ্রামীণ ব্যাংক চায়, সরকার শুধু একজন পরিচালক নিয়োগ করবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও গ্রামীণ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পর গত ২০ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাঁর পরিবর্তে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের শিক্ষক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
আবদুল হান্নান চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েই গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেন, যা অধ্যাদেশ আকারে জারি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ইতিমধ্যে অধ্যাদেশের একটি খসড়া তৈরি করে মতামতের জন্য গত ২৬ নভেম্বর থেকে ওয়েবসাইটে দিয়ে রেখেছে। তবে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এর ওপর কোনো মতামত পাওয়া যায়নি বলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বিষয়টি এখন কী পর্যায়ে আছে- তা জানতে চাইলে গতকাল শনিবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিভাগটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিয়ে এরই মধ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরেকটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সেটি হওয়ার পর চূড়ান্ত খসড়া দাঁড় করানো হবে। এর পর উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অনুমোদিত হলে তা যাবে আইন মন্ত্রণালয়ে। আইন মন্ত্রণালয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাঠানোর পর অধ্যাদেশ জারির জন্য তা পাঠানো হবে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ে।
প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় গ্রামীণ ব্যাংক একেবারেই আলাদা। প্রায় ২৪ হাজার কর্মচারীকে বছরে ৯০ কোটি টাকার বোনাসই দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। আমরা প্রস্তাব করেছি, এ ব্যাংকের পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ুক এবং তাঁরা আরও বেশি সুবিধা পানআবদুল হান্নান চৌধুরী, চেয়ারম্যান, গ্রামীণ ব্যাংক।অধ্যাদেশ হলে ঋণগ্রহীতারাই ধীরে ধীরে গ্রামীণ ব্যাংকের মূলধনে অবদান বাড়াবেন। গ্রামীণ ব্যাংকের ১২ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে বর্তমানে চেয়ারম্যানসহ সরকারের মনোনীত তিনজন পরিচালক এবং ঋণগ্রহীতাদের নির্বাচিত নয়জন পরিচালক রয়েছেন। নতুন প্রস্তাব পাস হলে ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে পরিচালকের সংখ্যা ৯ থেকে বেড়ে ১১ জনে উন্নীত হবে। আর মালিকানায় ঋণগ্রহীতাদের হিস্যা ৭৫ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ৯৫ শতাংশ। বর্তমান আইনে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও নতুন অধ্যাদেশ পাস হওয়ার পর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পর্ষদ সদস্যদের মধ্য থেকে।
বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সরকার তার মনোনীত দুই পরিচালকের মধ্যে একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারে। কিন্তু খসড়া প্রস্তাবে এ বিধান বাদ দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান অক্ষম হলে পর্ষদ সদস্যরাই অন্য কোনো পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন।
বিদ্যমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সর্বোচ্চ ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করতে পারেন। প্রস্তাবিত খসড়ায় এ বিধান বহাল রেখেও পর্ষদের অনুমোদনের ভিত্তিতে এমডির মেয়াদ সর্বোচ্চ ৬৫ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।
বর্তমান আইনে পরিচালকদের মেয়াদ তিন বছর, খসড়া অধ্যাদেশেও তাই রাখার কথা বলা হয়েছে। সংযোজন আকারে এও বলা হয়েছে, নবনির্বাচিত পরিচালকেরা তাঁদের দায়িত্ব গ্রহণ না করার আগে পর্যন্ত নির্বাচিত পরিচালকেরা পদে থাকবেন। বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের নতুন আঞ্চলিক অফিস খোলার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। অধ্যাদেশের খসড়ায় তা বাদ দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান আইনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জোবরা গ্রামে মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের কোনো উল্লেখ নেই। খসড়া অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্প বলতে ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধীন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামে পরিচালিত ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমকে বোঝায়। এ প্রকল্প পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন পায় এবং বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকসহ (বিকেবি) অন্যান্য ব্যাংক এতে অংশগ্রহণ করে।
জানতে চাইলে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হান্নান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, প্রচলিত ব্যাংকের তুলনায় গ্রামীণ ব্যাংক একেবারেই আলাদা। প্রায় ২৪ হাজার কর্মচারীকে বছরে ৯০ কোটি টাকার বোনাসই দেয় গ্রামীণ ব্যাংক। আমরা প্রস্তাব করেছি, এ ব্যাংকের পর্ষদে নারীদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ুক এবং তাঁরা আরও বেশি সুবিধা পান।’
প্রস্তাবিত খসড়া অনুমোদন হলে গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য তথা নারীরাই বেশি উপকৃত হবেন বলে মনে করেন আবদুল হান্নান চৌধুরী।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আনন্দবাজারের প্রতিবেদনকে ‘বলিউডি রোমান্টিক কমেডি’ বলল প্রেস উইং
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। প্রতিবেদনের বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি।
শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং ফ্যাক্টস ফেসবুকে তাদের ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে লিখেছে- ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলিউডের রোমান্টিক কমেডির চেয়েও বাস্তবতার সাথে কম মিল রয়েছে।’
প্রেস উইং ফ্যাক্টস আরও বলেছে, ভারতীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তথাকথিত ‘হাইব্রিড যুদ্ধ’ কৌশল ব্যবহার করছে, যা দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রক্সি হিসেবে কাজ করা শেখ হাসিনাকে সমর্থন দেওয়া এবং বাংলাদেশের জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে অসম্মান করার উদ্দেশে পরিচালিত হচ্ছে। দেশের যে জনগণ ও প্রতিষ্ঠানগুলো গত জুলাই-আগস্টে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়েছে, তাকে টার্গেট করা হচ্ছে।
হাইব্রিড যুদ্ধের অংশ হিসেবে তথ্য পরিচালনা বা ‘অপতথ্য’ ব্যবহার করা হচ্ছে, যাতে লক্ষ্যবস্তুকে অভ্যন্তরীণ এবং তার স্বাভাবিক বন্ধু ও মিত্রদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।
বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা সাধারণত একেবারে মনগড়া একটি গল্প দিয়ে শুরু হয়, যার কোনো বাস্তব ভিত্তি বা প্রমাণ থাকে না, বরং নামহীন ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি দিয়ে বানানো হয় এবং তা বন্ধুত্বপূর্ণ বা নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
প্রেস উইং ফ্যাক্টস উল্লেখ করে-‘যদি গল্পটি যথেষ্ট চটকদার হয়, তাহলে অন্যান্য সংবাদমাধ্যম এটি তুলে নেবে এবং প্রচারের ফলে এটি বিশ্বাসযোগ্যতা পাবে।’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘একপর্যায়ে, যারা বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চান কিন্তু বিশদ বিশ্লেষণের সময় পান না, তারাও এই গল্পটি সত্য বলে বিশ্বাস করতে পারেন, যা মূলত একজন প্রোপাগান্ডাবিদের কল্পনাপ্রসূত ধারণা ছাড়া আর কিছুই না।’
ফ্যাক্টস আরও উল্লেখ করেছে, মিথ্যা প্রচারণা ও অপতথ্যে বিশ্বাস করে মানুষ যখন যার বিরুদ্ধে প্রচার হচ্ছে, তাকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করে পদক্ষেপ নিতে শুরু করে, তখন তা পুরোপুরি সফল হয়।
এই ক্ষেত্রে, প্রতিপক্ষ হচ্ছে বাংলাদেশের জনগণ ও তাদের নিজস্ব সার্বভৌম রাষ্ট্র পরিচালনার আকাঙ্ক্ষা। আর স্বেচ্ছায় এই মিথ্যা প্রচারের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সম্পর্কে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন বাস্তবতার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই; এটি শুধুই একটি বলিউডি রোমান্টিক কমেডি।
ফ্যাক্টস আনন্দবাজারের উদ্দেশে বলেছে, ‘আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে আপনি কি প্রকৃত সাংবাদিকতা করবেন, যেখানে সত্য ঘটনা অনুসন্ধান করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়, নাকি মিথ্যা প্রচারণার অংশ হিসেবে মিথ্যা গল্প ছড়িয়ে একটি বন্ধুপ্রতীম দেশের সার্বভৌমত্ব ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবেন?’