শিশুর দৈহিক বৃদ্ধির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় প্রথম পাঁচ বছর, যাকে বলা হয় প্রারম্ভিক শৈশব। এ সময়ে তার বৃদ্ধি স্বাভাবিক গতিতে হচ্ছে কি না, তা পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় জরুরি। যেমন—
শিশুজীবনের প্রথম কয়েক মাস অন্তত মাসে একবার ওজন মেপে দেখা। পরে ৫ বছর পর্যন্ত ওজনের চার্ট পূরণ।
প্রথম ৫ বছর বয়স পর্যন্ত (অন্তত বছরে দুবার) উচ্চতা নির্ণয়।
শিশুর প্রথম ৬ মাস মাথার বেড় বা আকারের পরিমাপ নেওয়া।
শিশুর সুষম বৃদ্ধির বৈশিষ্ট্যপ্রি–স্কুল বয়স (২ থেকে ৫ বছর):
ভাষাজ্ঞান অর্জন।
বছরে প্রায় ২ কেজি (৪-৫ পাউন্ড) ওজন ও ৭-৮ সেমি (২-৩ ইঞ্চি) উচ্চতা প্রাপ্তি।
দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে প্রজনন অঙ্গের বৃদ্ধি।
৪ বছর বয়সের আগে কন্যাসন্তান ও ৫ বছরের আগে পুত্রসন্তানের ‘বিছানা ভেজানো’ স্বাভাবিক। এর পর থেকে শিশু প্রস্রাব-পায়খানার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়।
বাক্শক্তি ও ভাষাজ্ঞান নৈপুণ্য বিস্ময়করভাবে এগিয়ে চলে। আগের ৫০-১০০ শব্দ বলার ক্ষমতা এ সময় ২ হাজারের বেশি ছাড়িয়ে যায়।
২ বছর বয়সে ২ শব্দের, ৩ বছরে ৩ শব্দের, ৪ বছরে ৪ শব্দের বাক্যগঠনের সক্ষমতা।
৪ বছর বয়সে বেশির ভাগ শিশু ৪ পর্যন্ত গুনতে পারে ও অতীত কাল ব্যবহার করে কথা বলতে সক্ষম হয়। ৫ বছর বয়সে শিশু ভবিষ্যৎ কাল ব্যবহার করেও বাক্য তৈরি করতে পারে।
শৈশব (৬ থেকে ১১ বছর বয়স):ক্রমে স্বাধীন সত্তা দেখা দেয়। শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ও অন্যদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা পেতে উৎসুক থাকে।
দ্রুতগতিতে বেড়ে ওঠে। বছরে ৩-৩.
পুরো সময়টাতে মাথার বেড় বাড়ে ২ সেমির মতো।
সব ‘দুধদাঁত’ পড়ে যায় ও বছরে ৪টি করে স্থায়ী দাঁত ওঠে। ৯ বছরে পৌঁছে ১২টি স্থায়ী দাঁত ওঠে।
টনসিল ও এডিনয়েডগ্রন্থি স্ফীত থাকে।
এ বয়সে শিশুর জন্য সপ্তাহে তিন দিন ফিজিক্যাল এডুকেশন ক্লাস থাকা উচিত। দৈনিক অন্তত এক ঘণ্টা কায়িক শ্রমে যুক্ত করা প্রয়োজন।
বয়ঃসন্ধি:বয়ঃসন্ধি সাধারণভাবে শুরু হয় ১১-১২ বছর বয়সে। সমাপ্তি ঘটে ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে। বেড়ে ওঠে শরীর। মানসিক জগতে ঘটে প্রচুর পরিবর্তন।
বয়ঃসন্ধিকাল পর্বে প্রায় দ্বিগুণ ওজন লাভ করে। উচ্চতা বাড়ে ১৫-২০ শতাংশ। দেহের সব প্রধান অঙ্গ আকারে প্রায় দ্বিগুণ হয়।
কন্যাসন্তানের ঋতুচক্র শুরু হওয়ার ৬ মাস আগে বছরে ৮-৯ সেমি উচ্চতা যুক্ত হয়। ছেলেসন্তানের একটু দেরিতে উচ্চতার বৃদ্ধি শুরু হয়। এ হার বছরে ৯-১০ সেমি।
বয়ঃসন্ধির সূচনা মেয়েদের মধ্যে ছেলেদের তুলনায় প্রায় বছর দুই আগে সূচিত হয়।
সাড়ে ১১ থেকে ১২ বছরের মধ্যে একজন মেয়ে তার উচ্চতা বৃদ্ধির সর্বোচ্চ গতি পায়। ছেলেদের তা ঘটে ১৩ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বৃদ্ধির এ সময় মোটামুটি ২-৪ বছর। তবে ছেলেদের ক্ষেত্রে তা দীর্ঘ হতে পারে।
১১ বছরে পৌঁছে একজন মেয়ে ও ১২ বছরে পৌঁছে একজন ছেলে তার সম্পূর্ণ উচ্চতা প্রাপ্তির ৮৩-৮৯ শতাংশ পর্যন্ত অর্জন করে।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আগামীকাল পড়ুন: হঠাৎ শ্বাসকষ্টে করণীয়
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অস্কার মঞ্চে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরলেন অশ্রুসিক্ত জো
জমকালো আয়োজনের মধ্যদিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ডলবি থিয়েটারে অনুষ্ঠিত হয়েছে ৯৭তম একাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবারের আসরে সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী বিভাগের পুরস্কার জিতেছেন আমেরিকান তারকা জো সালদানা। ‘এমিলিয়া পেরেজ’ চলচ্চিত্রে একজন আইনজীবীর চরিত্রে অনবদ্য অভিনয়ের সুবাদে এই স্বীকৃতি উঠেছে তাঁর হাতে।
স্প্যানিশ-ভাষার সংগীতনির্ভর ছবিটি পরিচালনা করেছেন ফ্রান্সের জ্যাক অঁদিয়ার। অস্কারের মতো এমন অর্জন হাতে নেওয়ার পর অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী।
মঞ্চে উঠে আবেগাপ্লুত জোয়ি তাঁর মাকে স্মরণ করেন এবং ‘এমিলিয়া পেরেজ’-এর সব শিল্পী ও কলাকুশলীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এরপর তিনি শিল্প জগতে অভিবাসীদের অবদান তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘আমার দাদি ১৯৬১ সালে এই দেশে এসেছিলেন। আমি গর্বিত একজন অভিবাসী বাবা-মায়ের সন্তান, যারা স্বপ্ন, সম্মানবোধ ও কঠোর পরিশ্রমের মানসিকতা নিয়ে বড় হয়েছেন। আমি ডোমিনিকান বংশোদ্ভূত প্রথম আমেরিকান, যে একাডেমি অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করছে। আমি জানি, আমি শেষ ব্যক্তি নই। আমি আশা করি, এই পুরস্কার পাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই চরিত্রে আমি গান গাওয়ার ও স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছি। যদি আমার দাদি আজ বেঁচে থাকতেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হতেন।’
তার এই বক্তব্য এমন এক সময়ে দিলেন যখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন অভিবাসন নীতিতে কঠোর আগ্রাসন চালাচ্ছে।
চলচ্চিত্র দুনিয়ার সবচেয়ে বড় আকর্ষণ একাডেমি পুরস্কার তথা অস্কারের আয়োজন চলছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে হলিউডের ডলবি থিয়েটারে। অনুষ্ঠানটি শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটায়। আয়োজনের প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছেন আমেরিকান অভিনেতা কিয়েরান কালকিন। ‘আ রিয়েল পেইন’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেতার স্বীকৃতি পেলেন তিনি।
অন্যদিকে, এবার সেরা অ্যানিমেশন ছবি (স্বল্পদৈর্ঘ্য) হিসেবে ‘ইন দ্য শ্যাডো অব সাইপ্রেস’, ফিচার অ্যানিমেশন হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ‘ফ্লো’। সেরা মেকআপ এবং হেয়ারস্টাইল বিভাগে পুরস্কার জিতেছে গেল বছরের অন্যতম আলোচিত ছবি ‘দ্য সাবস্ট্যান্স’।
সেরা অ্যাডাপ্ট চিত্রনাট্যর পুরস্কার পেয়েছে আলোচিত ছবি ‘কনক্লেভ’। এছাড়া পল ট্যাজওয়েল ‘উইকেড’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা পোশাক পরিকল্পনাকারী এবং শন বেকার ‘আনোরা’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যের পুরস্কার পেয়েছেন।