ভারত–পাকিস্তানের ৯ বন্দীর মরদেহ পড়ে আছে হাসপাতালের হিমঘরে
Published: 12th, January 2025 GMT
ভারত ও পাকিস্তানের ৯ বন্দীর মরদেহ দেশের তিনটি হাসপাতালের হিমঘরে ছয় মাস থেকে সাড়ে তিন বছর ধরে পড়ে আছে।
বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ভারত ও পাকিস্তান নিজেদের নাগরিকদের মরদেহগুলো বুঝে নিচ্ছে না বলে জানিয়েছে কারা অধিদপ্তর। দিনের পর দিন মরদেহগুলো হিমঘরে সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকারের অর্থ যাচ্ছে।
কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো.
কারা অধিদপ্তর জানায়, নয়জনের মধ্যে আটজন ভারতীয়, একজন পাকিস্তানি। তাঁদের মধ্যে ছয়জনের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে। দুজনের মরদেহ আছে শরীয়তপুরের সদর হাসপাতালের হিমঘরে। আর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে অপর মরদেহটি।
ঢাকার হিমঘরে ছয় মরদেহকারা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, পাকিস্তানের নাগরিক মোহাম্মদ আলী ২০২১ সালের ১৮ জুন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে ছিলেন। তাঁর বাবার নাম সালামত। বাড়ি পাকিস্তানের করাচি। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছিল।
ভারতের নাগরিক ইমতাজ ওরফে ইনতাজের (৪৭) বাড়ি দেশটির উত্তর প্রদেশে। তাঁর বাবার নাম ফারুক আলী। নীলফামারী জেলায় তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। নীলফামারী জেলা কারাগারে থাকা অবস্থায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের হেফাজতে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২১ সালের ১৪ জুলাই তিনি মারা যান।
তারেক বাইনের বাড়ি ভারতের বিহারে। বাবার নাম মরন বাইন। ২০২১ সালের ৮ জুলাই শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারের হেফাজতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন। ২০২২ সালের ৩০ অক্টোবর তিনি মারা যান। পরে তাঁর মরদেহ গোপালগঞ্জ থেকে এনে ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘরে রাখা হয়।
ভারতের নাগরিক খোকন দাসের বাড়ি দেশটির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে। বাবার নাম অচিন দাস। ২০২২ সালের ৩ মার্চ খোকনের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগার ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। অসুস্থ হয়ে পড়লে ২০২৩ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
অশোক কুমারের বাড়ি ভারতের দিল্লি। তাঁর বাবার নাম মহেষ আগরওয়াল। অশোক নেত্রকোনা জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
ভারতের নাগরিক কুনালিকার বাড়ি দেশটির ঝাড়খন্ড রাজ্যে। বাবার নাম শাম্মাদি। ২০১৮ সালে তাঁর বিরুদ্ধে লালমনিরহাটের আদিতমারী থানায় অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা হয়েছিল। কুনালিকা লালমনিরহাট জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। এই কারাগারের হেফাজতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
উল্লিখিত ছয়জনেরই মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে আছে।
দুই মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের হিমঘরেসতেন্দ্র কুমারের বাড়ি ভারতের দিল্লি। বাবার নাম চন্দ্র পাল। অনুপ্রবেশের অভিযোগে ২০২২ সালের ৮ অক্টোবর তাঁর বিরুদ্ধে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ছিলেন। অসুস্থ হলে তাঁকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি তিনি মারা যান। তাঁর মরদেহ হাসপাতালটির হিমঘরে আছে।
একই দেশের নাগরিক বাবুল সিং। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের জাজিরা থানায় মামলা হয়েছিল। তিনি শরীয়তপুর জেলা কারাগারে ছিলেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল তিনি শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মারা যান।
খুলনা মেডিকেলের হিমঘরে এক মরদেহসুরাজ সিংহের বাড়ি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বাবার নাম সুদ্ধ সিং। অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ঝিনাইদহের মহেশপুর থানায় মামলা হয়েছিল। সর্বশেষ তিনি খুলনা জেলা কারাগারে ছিলেন। তিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৪ সালের ৭ জুলাই মারা যান।
কারা অধিদপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি, উন্নয়ন ও গণমাধ্যম) জান্নাত-উল-ফরহাদ প্রথম আলোকে বলেন, এই ৯ বিদেশি বার্ধক্যের কারণসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
কারা সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশের ৬৮টি কারাগারে ৪৬৭ জন বিদেশি বন্দী আছেন। কোনো বিদেশি বন্দী মারা গেলে তাঁর লাশ হস্তান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের হাইকমিশন বা দূতাবাসকে চিঠি দেওয়া হয়। নাম–পরিচয়-ঠিকানা যাচাই করে হাইকমিশন বা দূতাবাস পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু ২০২১ সালের ১৮ জুন থেকে ২০২৪ সালের ৭ জুলাই পর্যন্ত সময়ে মারা যাওয়া আট ভারতীয় ও এক পাকিস্তানি বন্দীর মরদেহ হস্তান্তরের বিষয়টি ঝুলে আছে। এসব মরদেহ নেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বারবার দেশ দুটির হাইকমিশনে চিঠি দেওয়া হলেও সাড়া মিলছে না।
কারা অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিধি অনুযায়ী তিন মাসের মধ্যে লাশ কোনো দেশ বুঝে না নিলে তা আঞ্জুমান মুফিদুলের মাধ্যমে দাফন বা সৎকার করা হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মানবিক বিবেচনায় তাঁরা লাশগুলো এখনো হিমঘরে সংরক্ষণ করছেন। তবে দেশ দুটি মহদেহগুলো গ্রহণ না করলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম বা অন্য কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে দাফন-কাফন বা সৎকারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঋণের অর্থছাড় নিয়ে আলোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অর্থছাড়ের বিভিন্ন শর্ত পর্যালোচনা করতে চলতি এপ্রিল মাসে ঢাকায় আসবে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।
এটি হতে যাচ্ছে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর আইএমএফের বড় কোনো দলের ঢাকায় দ্বিতীয় সফর।
চলমান ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় আইএমএফের কাছ থেকে বাংলাদেশ ২৩৯ কোটি ডলার কিস্তির অর্থ পাবে।
জানা গেছে, ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে বিভিন্ন শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় আইএমএফের একটি দল আগামী ৫ এপ্রিল ঢাকায় আসছে। দলটি ৬ এপ্রিল থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করবে। এ সফরে আইএমএফের দলটির সঙ্গে অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠক শেষে ১৭ এপ্রিল প্রেস ব্রিফিং করবে সফররত আইএমএফের দল। দলটি প্রথম দিন ৬ এপ্রিল এবং শেষ দিন ১৭ এপ্রিল বৈঠক করবে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে।
২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আইএমএফের সঙ্গে ঋণ কর্মসূচি শুরু হয়। এরপর তিনটি কিস্তির অর্থ পেয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। একই বছরের ডিসেম্বরে পেয়েছে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার। আর ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে বাংলাদেশ প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে। ঋণের অর্থছাড় বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। বিপত্তি দেখা দেয় চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের আগে। যদিও সরকার আশা করছে আগামী জুনে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইএমএফের ঋণের দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে পেতে বাংলাদেশের সামনে মোটাদাগে তিনটি বাধা রয়েছে। এগুলো হলো মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা, মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তি রাজস্ব আদায় ও এনবিআরের রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করা।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইএমএফকে জানানো হয়েছে, এসব শর্ত বাস্তবায়ন করা হবে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজস্ব নীতি থেকে রাজস্ব প্রশাসনকে আলাদা করার পদক্ষেপ ছাড়া বাকি দুটির বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই।
তবে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বিনিময় হার নির্ধারণ করা হচ্ছে। যার কারণে হঠাৎ ডলারের দাম খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ পদ্ধতিতে ডলারের দাম ১২২ টাকায় স্থিতিশীল আছে।
ঢাকা/হাসান/ইভা