রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য
Published: 12th, January 2025 GMT
রাশিয়ার জ্বালানি রাজস্ব আয় হ্রাস করতে এবার যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র অনেক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এবারের মতো এত কঠোর নিষেধাজ্ঞা আর কখনো দেয়নি।
এবার দুই শতাধিক কোম্পানি ও ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যেমন ব্যবসায়ী আছেন, তেমনি আছেন প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তি থেকে বিমা কোম্পানি ও শত শত তেলবাহী ট্যাংকার। আরেকটি বিষয় হলো, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম যুক্তরাজ্য সরাসরি রুশ জ্বালানি কোম্পানি গাজপ্রম ও আরও কয়েকটি কোম্পানির ওপর সরাসরি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। খবর বিবিসির
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, রাশিয়ার তেল কোম্পানিগুলোকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলে তাদের যুদ্ধের সক্ষমতা কমবে। পুতিনের কাছ থেকে যত রুবল কেড়ে নেওয়া যাবে, ততই তারা দুর্বল হবে।
বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয় যেসব ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি আইনে রূপান্তরিত করা হবে। এর অর্থ হলো, এসব আইন প্রত্যাহার করতে হলে ট্রাম্প প্রশাসনকে কংগ্রেসের দ্বারস্থ হতে হবে।
এখানেই শেষ নয়, এরপর কারা রাশিয়ার তেল আইনিভাবে কিনতে পারবে, সে বিষয়ে কঠোর সীমাবদ্ধতা আরোপ করতে যাচ্ছে তারা। এ ছাড়া মস্কোর যেসব গোপন তেলবাহী ট্যাংকার আছে, যেগুলোর মাধ্যমে তারা সারা বিশ্বে তেল সরবরাহ করে, সেগুলোর ওপরও খড়্গহস্ত হবে ওয়াশিংটন।
মার্কিন অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নতুন যেসব ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাতে রাশিয়ার তেল পরিবহন ও আর্থিক খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞার গেরো আরও কঠোর হচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মনে করছেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েছেন। তিনি যাতে এই যুদ্ধের মতো বাজে কাজ আর করে যেতে না পারেন, সে জন্য তাঁকে অস্বস্তির মধ্যে রাখতে হবে; যদিও রাশিয়া ভিন্নপথে ও ভিন্ন গ্রাহকের কাছে তেল বিক্রি করে অর্থনীতি বেশ চাঙা রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র যে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার জেরে যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসের দাম গ্যালনপ্রতি তিন থেকে চার সেন্ট বাড়তে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের এসব ব্যবস্থার কারণে রুশ অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে জ্যানেট ইয়েলেন উল্লেখ করেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এসব ব্যবস্থার জবাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার তেল বিক্রির রাজস্ব আয় হ্রাস করতে দেশটির তেলের দাম নির্ধারণ করে দেয় যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এসব কর্মকাণ্ডের প্রভাব সীমিত। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, মূলত রাশিয়ার তেলের সরবরাহ হ্রাসের লক্ষ্যে এসব নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তেলের সরবরাহ কমলে বাজারে তার কী প্রভাব পড়বে, তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় সরবরাহ হ্রাসের এ উদ্যোগ তেমন একটা কাজে আসেনি।
বিশ্লেষকেরা বরং বলছেন, তেলের বাজার এখন আগের চেয়ে ভালো অবস্থায়। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আটলান্টিক কাউন্সিল বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের তেলের উৎপাদন ও রপ্তানি এখন রেকর্ড উচ্চতায়; এ প্রবণতা অব্যাহত আছে। ফলে বাজারে রুশ তেলের সরবরাহ কমলেও তেমন প্রভাব পড়বে না।
এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ২০ জানুয়ারির পর ট্রাম্প প্রশাসনকে ভেবে দেখতে হবে, যুক্তরাষ্ট্রের এসব উদ্যোগের কোনো ফল আদৌ রুশ অর্থনীতিতে পড়বে কি না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করল ইসরায়েল
গাজায় সব মানবিক সহায়তা প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরায়েল। রোববার দেশটি হুঁশিয়ার দিয়ে বলেছে, হামাস যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির নতুন প্রস্তাব মেনে না নিলে ‘আরও পরিণতি’ ভোগ করতে হবে। তাদের অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্প্রসারণ পরিকল্পনায় রাজি হতে হবে।
বিবিসি জানিয়েছে, ইসরায়েলের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বিরুদ্ধে ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তারা বলেছে, গাজায় ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ করে দেওয়া নির্যাতনের এক সহজ উপায়, যুদ্ধাপরাধ ও চুক্তির (যুদ্ধবিরতি) ঘোরতর লঙ্ঘন। এই ঘটনায় মধ্যস্থতাকারীদের সহায়তাও চেয়েছে হামাস।
নেতানিয়াহুর দপ্তর এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রথম ধাপের বন্দিবিনিময় চুক্তি শেষ হয়েছে এবং হামাস উইটকফের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, আজ (রোববার) সকাল থেকে গাজায় সব ধরনের পণ্য ও সরবরাহ প্রবেশ বন্ধ থাকবে।
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির আওতায় এক মাসের কিছু বেশি সময় ধরে গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ পাচ্ছিল। কিন্তু রোববার সকাল থেকে গাজায় আর কোনো পণ্যবাহী ট্রাক প্রবেশ করেনি। এতে গাজায় হঠাৎ করে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। সেখানকার মানুষ ময়দা, রুটি যা পারছে তাই খুঁজছেন। যেন সারাদিন রোজা রাখার পর অন্তত ইফতার করা যায়। পণ্য সরবরাহ বন্ধ করায় আবারও না খেয়ে থাকায় শঙ্কায় পড়েছেন গাজাবাসী।
এদিকে আনুষ্ঠানিকভাবে গাজার যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপের ৪২ দিনের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ইসরায়েল জানিয়েছে, দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে কোনো ঐকমত্য না হলেও, এখনই হামলায় যাচ্ছে না তারা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব মেনে রমজান মাসে যুদ্ধ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে হামাস গাজার যুদ্ধবিরতির চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে আরও ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার ৪০০ জনে পৌঁছেছে।