জুলাই অভ্যুত্থান যেসব কারণে পূর্বপরিকল্পিত নয়
Published: 12th, January 2025 GMT
ভারতীয় গণমাধ্যমসহ দেশে ও দেশের বাইরে কেউ কেউ জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে ‘কালার রেভল্যুশন’ বলছেন। কালার রেভল্যুশন বলতে সাধারণত সেসব বিপ্লবকেই বোঝানো হয়, যেসব বিপ্লবে সরকারবিরোধী শক্তিগুলো বহিঃশক্তি (বিদেশি অর্থায়নে এনজিও, মিডিয়া, গণতন্ত্র ‘সহায়তাদানকারী’ সংস্থা) দ্বারা প্রভাবিত হয়।
কালার রেভল্যুশন শব্দবন্ধ মূলত সোভিয়েত-উত্তর দেশগুলোর জন্য ব্যবহার করা হয়, যেখানে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ থেকে আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে এবং পরবর্তী সময়ে শাসক পরিবর্তনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যারা এই রেভল্যুশনগুলোকে কালার রেভল্যুশন বলে মনে করেন, তাঁরা বিশ্বাস করেন যে এই রেভল্যুশনগুলোর ক্ষেত্রে শাসক পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে।
ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার শেখ হাসিনার শাসনামলে বাংলাদেশে বিভিন্নভাবে আধিপত্য কায়েম করে। হাসিনার শাসনামলে ভারতের শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত হত্যা, ট্রানজিট, পানিবণ্টন, বাণিজ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে যে আধিপত্যবাদী নীতি চর্চা করেছে, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তা অনিশ্চয়তা ও হুমকির মুখে পড়েছে।
এ কারণেই বাংলাদেশের তরুণদের এই বিজয়কে অবমূল্যায়ন করার অংশ হিসেবে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আন্তর্জাতিক প্রভাবকে আন্দোলনের প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চেয়েছে। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগও একই বক্তব্য প্রচারে আগ্রহী। কারণ, এর মাধ্যমে তরুণদের আকাঙ্ক্ষাকে অবমূল্যায়ন করা যায় এবং আওয়ামী লীগ সরকার পতনের অভ্যন্তরীণ কার্যকারণগুলোকে আড়াল করে বিদেশি ষড়যন্ত্রের ফলাফল হিসেবে হাজির করা যায়।
দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি, প্রতারণামূলক নির্বাচন ও অর্থনৈতিক সংকটে এমনিতেই বিক্ষুব্ধ ছিল।
সরকারের দমন-পীড়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থীকে এই সংগ্রামে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল।
অন্যদিকে কিছু বিষয়, যেমন ড.
কালার রেভল্যুশন যদি বহিঃশক্তির প্রভাবের সমার্থক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে দেখা যাচ্ছে, জুলাই অভ্যুত্থানকে কালার রেভল্যুশন বলার পক্ষে ও বিপক্ষে উভয় দিকেই বক্তব্য রয়েছে। তবে সেগুলো কতটা যুক্তিযুক্ত তার বিশ্লেষণ প্রয়োজন। লক্ষণগুলো আসলে কতটুকু পক্ষের ও বিপক্ষের যুক্তিগুলোকে গ্রহণ বা খারিজ করতে সক্ষম, তা নির্ভর করে এগুলো একটি আরেকটির চেয়ে কতটা বেশি গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য, তার ওপর।
এই প্রবন্ধে বেশ কিছু প্রশ্ন চিহ্নিত করে এর উত্তর বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে দেখিয়েছি কেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থান পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে না এবং শুধু বহিঃশক্তি নয়; যেকোনো একক শক্তি যেমন, জামায়াতে ইসলামী বা বিএনপির পক্ষে এককভাবে এর মূল পরিকল্পনাকারী হওয়া সম্ভব ছিল না। প্রথমেই আন্দোলনের পটভূমি বিশ্লেষণ করে চিহ্নিত করেছি কোন কারণগুলো সংস্কারবাদী কোটা আন্দোলনকে বিদ্রোহে রূপান্তরিত করেছিল, যা দুই মাসের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিকে নিয়ে গিয়েছে।
দ্বিতীয়ত, এই আন্দোলন কি আসলেই কোনো মাস্টারমাইন্ড দিয়ে পরিকল্পনা করা সম্ভব কি না এবং এনজিও বা বিদেশি অর্থায়ন কি আসলে এখানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে সক্ষম ছিল কি না, সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছি। তৃতীয়ত দেখিয়েছি, সশস্ত্র বাহিনী কেন ও কীভাবে আন্দোলনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। চতুর্থত দেখিয়েছি, কোন পর্যায়ে গিয়ে শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এই কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর বিশ্লেষণ করে জুলাই আন্দোলনকে ‘কালার রেভল্যুশন’, ‘রেভল্যুশন’ না ‘গণ–অভ্যুত্থান’ কোনটা বলা যায় সেই সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি।
পটভূমি থেকে উত্থিত প্রশ্ন২০২৪ সালের ৫ জুন হাইকোর্টের একটি রায়ের মাধ্যমে ২০১৮ সালের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাতিলকৃত ‘কোটাব্যবস্থা’ পুনর্বহাল করা হলে এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এই কোটাব্যবস্থার মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে লড়াই করা মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সরকারি চাকরির ৩০ শতাংশ সংরক্ষণ করা হতো।
ছাত্রদের অভিযোগ ছিল, স্বাধীনতাযুদ্ধের ৫০ বছর পর এটি একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থায় পরিণত হয়েছে, যা সরকারি চাকরিতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ কার্যক্রমকে দুর্বল করে দিয়েছিল। কোটার অপব্যবহার কার্যত আওয়ামী লীগের সমর্থকদের পৃষ্ঠপোষকতা বণ্টন করার একটি কৌশলে পরিণত হয়ে গিয়েছিল। যদিও প্রাথমিকভাবে আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল এই অন্যায্য কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের ব্যবস্থা গড়ে তোলা, পরবর্তী ঘটনাক্রমের মধ্য দিয়ে এই সংস্কারবাদী আন্দোলনই গণবিদ্রোহে রূপান্তরিত হয়।
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কেরা এবং বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে দেওয়া একটি বহুল প্রচারিত বক্তৃতায় অধ্যাপক ইউনূস এই আন্দোলনকে একটি ‘নিখুঁতভাবে পরিকল্পিত অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং একজন ছাত্রনেতাকে এর ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
ড. ইউনূসের এই বক্তব্যকে আক্ষরিক অর্থে নেওয়া উচিত নয়। কারণ, এটি একটি আলংকারিক বক্তৃতার অংশ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল। তবে এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের আন্দোলনের প্রকৃতি ও কারণ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তৈরি হয়। এই বিদ্রোহ কি কোনো মাস্টারমাইন্ড দ্বারা নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করা যেতে পারে?
অভ্যুত্থানের সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে শিক্ষার্থীদের পরিকল্পনা, সমন্বয় এবং কৌশলগুলোর প্রকৃতি কি আগে থেকে পরিকল্পনা করার মতো বিষয় ছিল? কেন অন্যান্য গোষ্ঠী ও শ্রেণি-পেশার মানুষ ছাত্রদের সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন, যার মধ্য দিয়ে এটি একটি গণবিদ্রোহে পরিণত করেছিল? বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী হাসিনাকে সমর্থন না করে কেন অভ্যুত্থানকারীদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল? আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতি রাজনৈতিক সমর্থন দুর্বল হওয়ার পেছনের কারণগুলো এখানে কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল?
ঘটনার সূত্রপাত করেছেন শেখ হাসিনা নিজেই১৪ জুলাই একটি সংবাদ সম্মেলনে উসকানিমূলক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন যে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের বদলে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করা রাজাকারদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের সরকারি চাকরি দেওয়া উচিত কি না। এই কথার মধ্য দিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বংশধর’ বলে যে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, তা তাঁদের বিক্ষুব্ধ করে তোলে।
শেখ হাসিনার এই উসকানিমূলক মন্তব্য এবং তার বিপরীতে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পূর্বপরিকল্পিত হতে পারে না। এই স্লোগানের প্রতিক্রিয়াস্বরূপ ১৫ জুলাই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ এই আন্দোলন দমন করার জন্য যথেষ্ট। এরপর ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ব্যাপক হামলা চালায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপর ছাত্রলীগের নৃশংস হামলার ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। আওয়ামী লীগের আগ্রাসী বক্তব্য ও দমনমূলক পদক্ষেপের সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়া স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। প্রতিবাদকারী ছাত্রদের দ্বারা এগুলো পূর্বপরিকল্পিত হতে পারত না।
১৬ জুলাই ঢাকা শহর থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে উত্তরবঙ্গের রংপুরে পুলিশের গুলিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ নিহত হন। তাঁর অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পুলিশের বন্দুকের সামনে অকুতোভয় ভঙ্গিতে বুক পেতে দিয়ে পুলিশকে গুলি করতে আহ্বান জানানোর ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ জমতে থাকে। পুলিশের মুখোমুখি আবু সাঈদের ভাবমূর্তি আইকনিক হয়ে ওঠে, সাহসিকতার এই স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশ সংক্রমিত হয় শিশু-কিশোর, তরুণ, বয়স্ক সবার মধ্যে। এই স্বতঃস্ফূর্ততাও পরিকল্পিত হতে পারে না।
অন্যান্য সামাজিক গোষ্ঠী ও শ্রেণির অংশগ্রহণ১৭ জুলাই ছাত্রলীগের কর্মীদের আবাসিক হল থেকে বের করে দেওয়া এবং বহু ছাত্রলীগের কর্মী একযোগে ছাত্রলীগ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় শেখ হাসিনা সরকার যারপরনাই ক্ষুব্ধ হয়। এদিনের পর সরকার বুঝতে পারে ছাত্রলীগকে কাজে লাগিয়ে এই আন্দোলন দমন আর সম্ভব নয়। এর জবাবে হাসিনা সরকার ১৮ জুলাই পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী পাঠিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসের হল থেকে জোর করে বের করে দেয়।
ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে ছাত্র প্রতিরোধের কেন্দ্রীয় ঘাঁটি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে সরকারের এই দমনমূলক পদক্ষেপে আন্দোলন সাময়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এ ঘটনার প্রভাবে ছাত্র-আন্দোলনটি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। কেননা, এই বিপর্যয়ের মুখে সংঘবদ্ধ হন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি উত্তরা, রামপুরা, বনশ্রী, যাত্রাবাড়ীসহ রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকার সাধারণ মানুষ আন্দোলনকারীদের সমর্থনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দমন-পীড়ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ এবং মাদ্রাসার অনেক শিক্ষার্থীকে এই সংগ্রামে যোগ দিতে বাধ্য করেছিল। রাস্তায় বিক্ষোভকারী ছাত্ররা তাদের পরিবারের সদস্য এবং শিক্ষকদেরও তাদের সমর্থনে নিয়ে আসে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবারের ছাত্রছাত্রী এবং দরিদ্র পরিবারের মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ আন্দোলনে বহু শ্রেণির মানুষ যোগদান করতে এগিয়ে আসে। মানুষের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন, পুলিশের আগ্রাসী ভূমিকা এবং সাধারণ নিরস্ত্র মানুষের ওপর রাষ্ট্রীয় দমন-পীড়ন সহ্য করতে না পেরে মানুষের এই রাস্তায় আসা কোনো বহিঃশক্তির পক্ষে পরিকল্পনা করে করা সম্ভব ছিল না।
পুলিশি নৃশংসতায় ব্যাপক হতাহতের প্রতিবাদে ১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে ৯ দফা দাবি জানানো হয়, যার মধ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমা চাওয়াসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের পদত্যাগের দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল। ৯ দফা দাবির মধ্য দিয়ে আন্দোলনটি কোটা সংস্কারের দাবি থেকে আরও বৃহত্তর রাজনৈতিক দাবিদাওয়ার আন্দোলনে পরিণত হয়।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল: রাষ্ট্রীয় সহিংসতায় নিহত, আহত ও অপহৃত সবার জন্য ন্যায়বিচার আদায়ের আকাঙ্ক্ষা। ১৯ থেকে ২৯ জুলাই সময়ের মধ্যে আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। মেট্রোরেল ও বিটিভিতে হামলা-পরবর্তী ধ্বংসযজ্ঞের দৃশ্য দেখে শেখ হাসিনার ‘আবেগাপ্লুত’ হওয়া এবং অন্যদিকে পুলিশি সহিংসতায় নিহত ব্যক্তিদের প্রতি অবহেলা জনমনে ভয়াবহ বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করে।
কোটা সংস্কারের লক্ষ্য থেকে সরে এসে আন্দোলনের দিক পরিবর্তন হয় ন্যায়বিচার পাওয়ার লক্ষ্যের দিকে। এই আন্দোলন তখন আর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সীমাবদ্ধ থাকেনি। আন্দোলনের দিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের অংশগ্রহণ ব্যাপকভাবে বাড়তে থাকে। অবশেষে ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা পরিণত হয় শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফার দাবিতে।
দেশের মানুষ শেখ হাসিনা সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি, প্রতারণামূলক নির্বাচন ও অর্থনৈতিক সংকটে এমনিতেই বিক্ষুব্ধ ছিল। সরকারের অর্থনৈতিক নীতির কারণে মানুষের জীবন-জীবিকা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এ রকম একটা পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা যখন সব ধরনের হুমকি ও দমন-পীড়ন উপেক্ষা করে স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যায়, দেশের সাধারণ মানুষ তখন তাদের সঙ্গে একাত্মতা বোধ করে রাস্তায় নেমে আসে। এই আন্দোলনে সাধারণ মানুষের ব্যাপক অংশগ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করতে হলে শুধু সেই মুহূর্তের স্ফুলিঙ্গ দেখলে চলবে না, তাদের এই অংশগ্রহণকে হাসিনা সরকারের আমলে ক্রমাগত নিপীড়ন, বৈষম্য, মর্যাদাহানির অভিজ্ঞতার পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ হিসেবেও দেখতে হবে।
● ড. মোশাহিদা সুলতানা সহযোগী অধ্যাপক, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ বিশ্লেষণমূলক ত্রৈমাসিক জার্নাল সর্বজন কথার প্রকাশক।
আগামীকাল পড়ুন কালার রেভল্যুশন, রেভল্যুশন নাকি গণ-অভ্যুত্থান
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ