পরামর্শক কমিটি স্থায়ী সমাধান নয়
Published: 12th, January 2025 GMT
প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারীকে যোগ্য জায়গায় নিয়োগ, পদায়ন ও পদোন্নতি দেওয়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ। সে ক্ষেত্রে যোগ্য পদে যোগ্য ব্যক্তিকেই পদায়ন করা উচিত, যাতে কাজটি ভালোভাবে সম্পন্ন হয়। অতীতে বিভিন্ন সরকারের আমলে যোগ্য ব্যক্তিরা নিয়োগ–পদায়ন পাননি রাজনৈতিক চাপ ও তদবিরের কারণে।
ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই ধারার অবসান হবে বলেই সবাই আশা করেছিলেন। অথচ গত পাঁচ মাসের অভিজ্ঞদতা মোটেই সুখকর নয়। বিভিন্ন মহলের চাপ ও তদবিরে সরকারকে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করতে হয়েছে, যা জনপ্রশাসনে একধরনের অস্থিরতা তৈরি করেছে। দেরিতে হলেও সরকার সমস্যাটি উপলব্ধি করেছে। এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু প্রতিকার হিসেবে প্রশাসন, পুলিশ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ–বদলির ক্ষেত্রে যে তিনজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, তার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও বদলির ক্ষেত্রে প্রশাসন, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রবিষয়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে তিনজন উপদেষ্টার নেতৃত্বে। তিন কমিটির নেতৃত্ব দেবেন যথাক্রমে সালেহউদ্দিন আহমেদ (প্রশাসন), জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (পুলিশ) ও মো.
এর মাধ্যমে এটাও প্রমাণিত হলো যে নিয়োগ–পদায়নের ক্ষেত্রে যে প্রশাসনিক কাঠামো আছে, সেটা কাজ করছে না। গত কয়েক মাস পদায়ন–নিয়োগ নিয়ে সচিবালয় ও মাঠপর্যায়ের প্রশাসনে বেশ কিছু অঘটনও ঘটেছে। দ্বিতীয়ত উপদেষ্টাদের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাজটিও সহজসাধ্য নয়। প্রতিটি বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার আগে তাঁদের পুরো তালিকা যাচাই–বাছাই করতে হবে। কিন্তু প্রশাসনের কাজ চালানোর জন্য অনেক ক্ষেত্রেই নিয়োগ–পদায়নে ত্বরিত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। প্রধান ছাড়াও কমিটিতে একাধিক উপদেষ্টাকে যুক্ত করা হয়েছে। নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের কাজের পর তাঁরা কতটা সময় দিতে পারবেন, সেটাও প্রশ্ন।
শুরু থেকে অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মনীতি মেনে জনপ্রশাসনের পদায়ন ও নিয়োগ দিলে হয়তো পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না। সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার উল্লেখ করলে জনপ্রশাসনে অস্থিরতার মাত্রাটি পরিষ্কার হবে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের বদলির ফাইল দুবার পরিবর্তন হয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর প্রথমে তাঁকে জীবন বীমা করপোরেশনে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে বদলি করা হয়। ৬ জানুয়ারি আবার জানানো হয়, তাঁকে বদলি হতে হবে না, আগের কর্মস্থলে দায়িত্ব পালন করবেন। এরপর ৯ জানুয়ারি তাঁকে আবার অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক পদে বদলি করা হয়। প্রায় অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকের ক্ষেত্রেও।
জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞদের মতে, স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছরে ব্যাপক দলীয়করণ, মেধা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগের কারণে প্রশাসনে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে নিয়োগ–বদলি ও পদায়নের যে কাঠামো আছে, সেটিকে পুরোপুরি কার্যকর করা দরকার। কিন্তু সরকার সেটি না করে উপদেষ্টা কমিটি গঠনের মাধ্যমে নিজেদের দায় অনেকটা অন্যের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে।
এ মুহূর্তে যদি বাস্তবতা এমন হয় যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের সাহস নেই চাপও উপেক্ষা করার; সে ক্ষেত্রে উপদেষ্টা কমিটি সাময়িক শুশ্রূষা হতে পারে। কিন্তু স্থায়ী সমাধান নয়। প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হলে শৃঙ্খলাটি কেন ভেঙে পড়ল, সেই কারণও খুঁজে বের করতে হবে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কমিটি যাতে সব ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সক্রিয় সহযোগিতা ও সমর্থন প্রয়োজন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সামারিক শক্তিতে মিয়ানমারের চেয়ে ২ ধাপ এগিয়ে বাংলাদেশ
চলতি বছর সামরিক শক্তির দিক থেকে মিয়ানমারের চেয়ে দুই ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। চলতি সপ্তাহে সামরিক শক্তি পর্যবেক্ষক প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফায়ার পাওয়ার প্রকাশিত সূচকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এই র্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের সামরিক বাজেট। সেনাবাহিনীর আকার, নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনীর শক্তিকেও বিবেচনা করা হয়েছে সমীক্ষায়।
গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ারের সূচক অনুযায়ী, বিশ্বে সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, এরপরে পরে রয়েছে রাশিয়া, চীন, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। পরমাণু শক্তিধর হলেও পাকিস্তানের অবস্থান ১২ নম্বরে। তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে ৩৫তম অবস্থানে। বাংলাদেশের আগে রয়েছে উত্তর কোরিয়া ও আর্জেন্টিনা। আর বাংলাদেশের প্রতিবেশী মিয়ানমার রয়েছে ৩৭তম অবস্থানে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটির বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৬ কোটি ৬১ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে মোট সেনা সংখ্যা ১ লাখ ৬৩ হাজার। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৭ হাজার ৪০০ সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ২৫ হাজার ১০০ সেনা।
অন্যদিকে, মিয়ানমারের মোট জনসংখ্যা ৫ কোটি ৭৫ লাখ। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ সামরিক বাহিনীতে যুক্ত হওয়ার যোগ্য। মিয়ানমারের সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার। মিয়ানমারের রিজার্ভ সৈন্য রয়েছে ২০ হাজার। দেশটির বিমানবাহিনীতে রয়েছে ১৫ হাজার সদস্য এবং নৌবাহিনীতে রয়েছে ১৬ হাজার সেনা।
ঢাকা/শাহেদ