রোগবালাই বলে–কয়ে আসে না। যে কেউ যেকোনো সময় অসুস্থ হতে পারেন। এতে ভুক্তভোগী ব্যক্তিই শুধু নন, প্রতিষ্ঠানও ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। অসুস্থ হলে কর্মীরা ছুটি নিয়ে থাকেন। তবে এমন অভিযোগও আছে, কেউ কেউ নাকি অসুস্থতার জন্য ছুটি নিয়ে অন্য কাজে লাগান। এমন কর্মীদের খুঁজে বের করতে বিচিত্র এক কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে জার্মানির কিছু প্রতিষ্ঠান। কর্মীরা আসলেই অসুস্থ কি না, তা দেখতে বেসরকারি গোয়েন্দা নিয়োগ দিচ্ছে তারা।

এমন একটি বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থার নাম ‘লেনৎজ গ্রুপ’। তাদের কার্যালয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরের প্রধান রেলস্টেশনের কাছে। সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মার্কাস লেনৎজ বলেন, জার্মানিতে অসুস্থতার জন্য ছুটি নেওয়া কর্মীদের পেছনে গোয়েন্দা দিয়ে খোঁজখবর নেওয়ার ঘটনা বাড়ছে। বছরে তাঁরা এমন প্রায় ১ হাজার ২০০টি কাজ পাচ্ছেন। কয়েক বছর আগের তুলনায় তা প্রায় দ্বিগুণ।

জার্মানির আইন অনুযায়ী, বছরে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত অসুস্থতার ছুটি নিতে পারেন একজন কর্মী। এ সময়ে তাঁর নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান পুরো বেতন দিতে বাধ্য। মূলত যাঁরা মিথ্যা বলে ছুটি কাটাচ্ছেন, তাঁদের ছাঁটাই করতেই দেশটির প্রতিষ্ঠানগুলো গোয়েন্দা নিয়োগের পথ বেছে নিয়েছে। মার্কাস লেনৎজ বলেন, কেউ যদি বছরে ৩০, ৪০ বা ১০০ দিন পর্যন্ত ছুটি কাটান, তাহলে একপর্যায়ে তাঁরা নিয়োগদাতার কাছে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠেন। এমন অনেককে পাওয়া গেছে, যাঁরা অসুস্থতার ছুটি নিয়ে পারিবারিক ব্যবসায় সময় দিয়েছেন বা বাড়ি সংস্কারের কাজ করেছেন।

জার্মানির সরকারি পরিসংখ্যান সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটির কর্মীরা গড়ে ১৫ দশমিক ১ দিন অসুস্থতাজনিত ছুটি কাটিয়েছেন। ২০২১ সালে তা ছিল ১১ দশমিক ১ দিন। ছুটির কারণে ২০২৩ সালে জার্মানির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ কমেছিল বলে ধারণা করা হয়।

তবে অনেক সময় এই গোয়েন্দাগিরি ব্যর্থ হতেও দেখা গেছে। যেমন ইতালিতে একজন বাসচালককে ছুটি নেওয়ার পর একটি পানশালায় গান গাইতে দেখা যায়। ফলে তাঁকে চাকরিচ্যুত করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। পরে আদালতে প্রমাণিত হয়, শারীরিক অবস্থার উন্নতির জন্যই গান গাইতে গিয়েছিলেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

এক বছরে ৭৮৩ কোটি টাকা লোকসানের রেকর্ড বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের

শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্স বা বিডি ফাইন্যান্স গত বছর রেকর্ড পরিমাণ লোকসান করেছে। বছর শেষে কোম্পানিটির লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮৩ কোটি টাকা। যে কারণে ২০২৪ সালের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিডি ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ রোববার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ লোকসান হওয়ার কারণও জানিয়েছে। বলেছে, খেলাপি ঋণ ও শেয়ারবাজারে বিতরণ করা মার্জিন ঋণ এবং বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের বিপরীতে বর্তমান-ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বিবেচনায় শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করা হয়েছে। বছর শেষে খেলাপির ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মতো প্রভিশনিং করেছে কোম্পানিটি। এ কারণে বছর শেষে কোম্পানিটি বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে।

কোম্পানি-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে বিডি ফাইন্যান্সের লোকসান হয়েছিল প্রায় ১০৪ কোটি টাকা, যা গত বছর সাড়ে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮৩ কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করার পর এটিই কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় লোকসানের রেকর্ড। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ৯ মাস জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে বিডি ফাইন্যান্সের লোকসান হয়েছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। বছর শেষে তা একলাফে ৭৮৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তাতে বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) দাঁড়ায় ৪১ টাকা ৬১ পয়সা। ২০২৩ সালে লোকসান হয়েছিল ৫ টাকা ৬০ পয়সা।

বড় ধরনের এই লোকসানের কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কায়সার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সব ধরনের ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনিং করা হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ, শেয়ারে বিনিয়োগ ও প্লেসমেন্টের বিপরীতে যেসব ঋণ অনাদায়ি এবং ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সেসব বিনিয়োগের বিপরীতেও আমরা শতভাগ প্রভিশনিং করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে নানা ছাড় নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমরা সেটি করিনি। বরং শতভাগ প্রভিশনিং করেছি, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই গত বছর বড় লোকসান হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনিং করায় ভবিষ্যতে বিডি ফাইন্যান্স একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।’

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স হচ্ছে আনোয়ার গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এটির প্রায় সাড়ে ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এবং প্রায় সাড়ে ৫৪ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের সর্বশেষ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২২ সালের জন্য। ২০২৪ সালের মতো ২০২৩ সালেও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে নানা ছাড় নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমরা সেটি করিনি। বরং শতভাগ প্রভিশনিং করেছি, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই গত বছর বড় লোকসান হয়েছে।কায়সার হামিদ, এমডি, বিডি ফাইন্যান্স।  

এদিকে রেকর্ড লোকসানের খবরে আজ রোববার ঢাকার শেয়ারবাজারে বিডি ফাইন্যান্স শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৮ শতাংশ বা ৮০ পয়সা কমে ৯ টাকা ২০ পয়সায় নেমেছে। এদিন কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে ৮ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়। দুই বছরের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৪০০ শতাংশ বা ৩৫ টাকা কমেছে। পরপর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটিকে দুর্বল মানের ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে জেড শ্রেণিভুক্ত হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন হবে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় কোম্পানিটির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না। পাশাপাশি এটির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তিতেও এক দিন বেশি সময় লাগবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০৫ শতাংশ চূড়ান্ত নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করল বাটা
  • কোহলি–আনুশকা থেকে পন্ত–ইশা: ভারতীয় ক্রিকেটারদের ‘লাভ স্টোরি’
  • সফটওয়্যার পাইরেসি বন্ধে দরকার সমন্বিত পদক্ষেপ
  • বিমানবন্দরে ৫৫ কেজি সোনা চুরির মামলাটি পিবিআই থেকে দুদকে হস্তান্তর
  • মেধাস্বত্ত্ব ফিরে পেতে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দ্বারস্থ সিনেমার প্রযোজকরা
  • বাংলাদেশের ই-কমার্স: কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই
  • মাটি, পানি, খাবার থেকে দেহে ঢুকছে প্লাস্টিক
  • সিপিডির গবেষণা: ২০২৩ সালে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি
  • ২০২৩ সালে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি
  • এক বছরে ৭৮৩ কোটি টাকা লোকসানের রেকর্ড বাংলাদেশ ফাইন্যান্সের