করোনাভাইরাসের মহামারির সময়ে বাড়িতে অলস বসে থাকার চেয়ে ওষধি গাছ হিসেবে জিনসেং চাষ করতে চেয়েছিলেন আইনুল ইসলাম। কিন্তু এর জন্য কোনো জমি পাচ্ছিলেন না। এমন অবস্থায় নিজ বাড়ির ছাদেই জিনসেং চাষের সিদ্ধান্ত নেন। এতে সফল হয়েছেন তিনি। জিনসেং থেকে আয় দিয়ে বর্তমানে তিনি সংসার চালাচ্ছেন।

আইনুলের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দৌলতপুর গ্রামে। স্নাতক পাস করা এই যুবক ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি বাড়ির ছাদের ১ হাজার ৬৫০ বর্গফুটের পুরো জায়গায় প্রায় দুই হাজার বস্তায় জিনসেং চাষ করছেন।

আইনুল ইসলাম জানান, ২০২০ সালে করোনার সময়ে ইউটিউবে ঔষধি গাছ জিনসেং সম্পর্কে জেনেছেন। তবে চাষের জন্য জমি না থাকায় স্থির করেন বাড়ির ছাদেই চাষ শুরু করবেন। এ জন্য ছাদে বস্তার ভেতর বেলে দোআঁশ মাটি দিয়ে জিনসেং গাছের চারা রোপণ করেন। আর এসব গাছের চারা সংগ্রহ করেছিলেন উপজেলার গোবিন্দপাড়া থেকে। ইউটিউব থেকে শেখা চাষের পদ্ধতি অনুসরণে এক বছরের মধ্যে ভালো ফল পান তিনি। পরে সেগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করে ছাদের প্রায় পুরো অংশেই বাণিজ্যিকভাবে জিনসেং চাষ শুরু করেন।

তবে চাষাবাদের শুরুতে আইনুলকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বাবা ও ভাইয়ের পাশাপাশি স্ত্রীও এর বিরোধিতা করেছেন। জিনসেংকে আগাছা উল্লেখ করে টবে ফুল-ফলের চারা লাগানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন তাঁরা। তবে নিজের ভাবনায় অটল ছিলেন আইনুল। এক বছরের মধ্যে পরিবারের সব সদস্যের ধারণা পাল্টে দেন।

পরিপক্ব হওয়ার পর জিনসেং সংগ্রহ করা হয়। জিনসেং দেখাচ্ছেন আমিনুল.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আবরারকে ফাহাদকে দেওয়া হচ্ছে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক

প্রতিবাদ করে জীবন দেওয়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়া হচ্ছে।

২০১৯ সালের অক্টোবরে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বর্তমানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সোমবার (৩ মার্চ) তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে আবরারকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০২৫ দেওয়ার তথ্য দিয়েছেন।

আরো পড়ুন:

বুয়েটে এবারও দুই ধাপে ভর্তি পরীক্ষা

বুয়েটে ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে অত্যাধুনিক ন্যানো ল্যাব স্থাপনের ঘোষণা পলকের

পোস্টে তিনি লিখেছেন, “অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহসিকতার প্রতীক, মুক্ত চিন্তার এক প্রতিচ্ছবি আবরার ফাহাদ। মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক ২০২৫-এ ভূষিত হওয়া তার আত্মত্যাগের স্বীকৃতি। তার আদর্শ আমাদের আলোকিত করে, ন্যায়বিচারের পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা দেয়। জাতি তোমাকে ভুলবে না, আবরার!”

রবিবার (২ মার্চ) সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ স্বাধীনতা পদক ২০২৫ এর তালিকার বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
 
স্বাধীনতা পদকের জন্য এবার যাদের মনোনীতি করা হয়েছে, তাদের বিষয়ে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, পদকের জন্য তারা যাদের নাম সুপারিশ করেছেন, তারা এমন সব ব্যক্তি যারা বাংলাদেশের জন্য জীবনব্যাপী অবদান রেখেছেন এবং নতুন কিছু তৈরি করেছেন, যার ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। 
অবশ্য ওয়াহিদউদ্দিন বলেছিলেন, স্বাধীনতা পদকের জন্য কারও নাম চূড়ান্ত হয়নি। তারা শুধু সুপারিশ করেছেন। সেই সুপারিশ উপদেষ্টা পরিষদে পাস হলেই সেটি চূড়ান্ত হবে।

জাতীয় পুরস্কারসংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সদস্য আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল রবিবার বলেছিলেন, “আপনারা একুশে পদক দেখে খুশি হয়েছিলেন, এ পুরস্কার (স্বাধীনতা পদক) দেখে আপনারা আরও খুশি হবেন।”

কথার মাঝে আইন উপদেষ্টা বলেছিলেন, ২০২৫ সালে স্বাধীনতার পুরষ্কার দেওয়া হবে ১০ জনের কম মানুষকে। 

আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল। এ ঘটনায় তার বাবা চকবাজার থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি তদন্ত করে বুয়েটের ২৫ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।

মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর রায় দেন ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। রায়ে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আসামিদের মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য বিচারিক আদালতের রায়সহ নথিপত্র ২০২২ সালের ৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এসে পৌঁছায়, যেটি ডেথ রেফারেন্স হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

মামলায় আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন), আপিল ও জেল আপিলের ওপর গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টে শুনানি শেষ হয়। মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন হাইকোর্ট। অর্থাৎ, এখন যেকোনো দিন রায় ঘোষণা হতে পারে।

ঢাকা/হাসান/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ