অবয়বের প্রতিধ্বনি: এক ব্যতিক্রমী ঘরোয়া প্রদর্শনী
Published: 11th, January 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মোড়ের ‘রাজু স্মারক ভাস্কর্য’ বাস্তবে, ছবিতে বা টেলিভিশনের পর্দায় দেখেননি দেশে এমন মানুষ কম। দাবিদাওয়া, প্রতিবাদ–প্রতিরোধ আন্দোলন শুরুর পীঠস্থানে পরিণত হয়েছে সড়কদ্বীপের এই বৃত্তাকারে ভাস্কর্যটি। হাতে হাতে বন্ধন রচনা করে দৃঢ় পদক্ষেপে আগুয়ান তরুণ-তরুণীর এই ভাস্কর্য যিনি তৈরি করেছেন, সেই ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী এখন প্রায় নিশ্চল। ঘরের নিভৃতে কাটছে তাঁর দুঃসহ দিনরাত্রি। নিজ বাসাতেই পরিবারের পক্ষে আয়োজন আয়োজন করা হয়েছে ‘অবয়বের প্রতিধ্বনি’ নামে ব্যতিক্রমী এক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।
শুক্রবার বিকেলে তিন দিনের এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিল্পী মনিরুল ইসলাম ও প্রাবন্ধিক মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক। শ্যামলীর ৪ নম্বর সড়কের অ্যাম্ব্রসিয়া নামের বাড়িতে প্রদর্শনী আজ শেষ হবে। বেলা দুইটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত আসতে পারবেন দর্শকেরা।
ভাস্কর শ্যামল চৌধুরীর জন্ম ১৯৬২ সালে নেত্রকোনায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে ১৯৮৬ সালে ভাস্কর্যে প্রথম বিভাগে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে যুক্তরাজ্যের গ্লাচেস্টারসয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবাসিক শিল্পী হিসেবে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। লন্ডনেই তাঁর প্রথম একক শিল্পকর্মের প্রদর্শনী হয়েছিল। রাজুস্মারক ভাস্কর্য ছাড়াও পাবনা এবং পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, গৃহায়ণ অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনে, সোনারগাঁর লোক ও কারুশিল্প জাদুঘরসহ বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় আকারের ভাস্কর্য তৈরি করেছেন ভাস্কর শ্যামল চৌধুরী।
বাংলাদেশে উন্মুক্ত স্থানে নির্মিত ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম প্রধান ভাস্কর। একটি স্বতন্ত্র ধরা সৃষ্টি করেছেন তিনি।
শ্যামল চৌধুরী ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের ত্রিশালে কমরেড ময়মনসিংহের একটি ভাস্কর্য তৈরি শেষে ঢাকায় ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হন। তাঁর স্ত্রী মণি চৌধুরী জানালেন দুর্ঘটনায় তিনি শরীরের এক পাশ ও মস্তিষ্কে গুরুতর আঘাত পেয়েছিলেন। ভারতে ও দেশে দীর্ঘদিনের চিকিৎসার পরে জীবন রক্ষা পেলেও কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা ভাস্কর্য ও রেখাচিত্র নিয়ে ঘরোয়াভাবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। তাঁর মেয়ে রূপকল্পা চৌধুরী রবীন্দ্রভারতী থেকে ভাস্কর্যে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। তিনিই বাবার শিল্পকর্মগুলো থেকে বাছাই করা ৪৫টি শিল্পকর্ম নিয়ে এই প্রদর্শনীর কিউরেটর হিসেবে কাজ করেছেন। এখানে ফাইবার গ্লাসে করা বেশ কিছু ভাস্কর্য ছাড়াও রয়েছে তাঁর ছাত্রজীবন থেকে বিভিন্ন সময় করা রেখাচিত্র—স্কেচ খাতা। বিভিন্ন ভাস্কর্য তৈরির সময়ের আলোকচিত্র এবং একটি ভিডিও চিত্র।
বিদেশে শিল্পীদের বাড়িতে বা স্টুডিওতে নিজের কাজের প্রদর্শনী করার রীতি থাকলেও আমাদের দেশে এর প্রচলন নেই বলে জানালেন রূপকল্পা চৌধুরী। তিনি বললেন, ইদানীং তাঁর বাবা হাতে পেনসিল ধরতে পারছেন। কিছু আঁকার চেষ্টা করছেন। কাজ করতে না পারায় তিনি মনে অত্যন্ত কষ্ট বোধ করেন। মূলত তাঁকে উৎসাহিত করতেই এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির চতুর্থ পরীক্ষার দিনে বহিষ্কার ৭৮
মাধ্যমিক ও সমমান পরীক্ষার চতুর্থ দিনে ৭৫ পরীক্ষার্থী এবং তিনজন কক্ষ পরিদর্শকসহ মোট ৭৮ জন বহিষ্কার হয়েছেন; আর অনুপস্থিত ছিল ২৮ হাজার ১২০ পরীক্ষার্থী।
এসএসসি ও সমমানের চতুর্থ দিনের পরীক্ষা শেষে সোমবার (২১ এপ্রিল) এই তথ্য দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
এদিন এসএসসিতে গণিত ও দাখিলে বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা হয়। এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে কোনো পরীক্ষা ছিল না।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক খন্দোকার এহসানুল কবিরের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে চতুর্থ দিনে ২৮ হাজার ১২০ জন পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতি এবং ৭৮ জনের বহিষ্কৃত হওয়ার তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সোমবারের পরীক্ষায় ১৬ লাখ ৬২ হাজার ১৪৩ পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অংশ নেন ১৬ লাখ ৩৪ হাজার ২৩ জন। বাকি ২৮ হাজার ১২০ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
পরীক্ষার ৩ হাজার ১৪টি কেন্দ্রের মধ্যে বিদেশের ৯টি কেন্দ্র ছাড়া ৩ হাজার ৭টি কেন্দ্রের তথ্য দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
গণিত পরীক্ষায় বহিষ্কার অর্ধশত
৯টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২ হাজার ২৯১টি কেন্দ্রে এসএসসির গণিত পরীক্ষায় ৪৭ পরীক্ষার্থী এবং তিনজন পরিদর্শক বহিষ্কৃত হয়েছেন।
বিদেশের ৯টি কেন্দ্র ছাড়া ২ হাজার ২৮২টি কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলেছে, ঢাকা বোর্ডে সাতজন, রাজশাহী বোর্ডে দুজন, কুমিল্লা বোর্ডের ১২ জন, যশোর বোর্ডের চারজন, বরিশাল বোর্ডের চারজন, দিনাজপুর বোর্ডের পাঁচজন ও ময়মনসিংহ বোর্ডের ১১ পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে।
ময়মনসিংহ বোর্ডে দুজন পরিদর্শক এবং সিলেট বোর্ডে একজন পরিদর্শককে বহিষ্কার করা হয়েছে সোমবার।
১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৩৭৪ পরীক্ষার্থীর এই বিষয়ের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল, যেখানে অংশ নেয় ১৩ লাখ ৪১ হাজার ৫৬১ জন; আর অনুপস্থিত ছিল ১৫ হাজার ৮১৩ জন।
ঢাকা বোর্ডের ৪৩৮টি কেন্দ্রে ৪ হাজার ৭৬৬ জন, রাজশাহী বোর্ডের ২৬৯টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৭ জন, কুমিল্লা বোর্ডের ২৭৩টি কেন্দ্রে ২ হাজার ১০১ জন, যশোর বোর্ডের ২৯৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৯৭৩ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডের ২১৯ টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৩৮৪ জন, সিলেট বোর্ডের ১৫৪টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১০৭ জন, বরিশাল বোর্ডের ১৯৪টি কেন্দ্রে ১ হাজার ২৭৪ জন, দিনাজপুর বোর্ডের ২৮০টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৭০৭ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডের ১৫৬টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৭১ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল।
দাখিলের বাংলা পরীক্ষায় বহিষ্কার ২৮
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিলের বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষায় ২৮ জন পরীক্ষার্থীর বহিষ্কৃত হওয়ার তথ্য দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
কমিটির তথ্য বলছে, ৭২৫টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭০৩ পরীক্ষার্থীর এদিন পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অংশ নেয় ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭৩ জন। ১০ হাজার ৬৩০ জন অনুপস্থিত ছিল।
আরো পড়ুন:
কৃষিবিদদের বৈষম্য নিরসনে বাকৃবি শিক্ষার্থীদের ৬ দাবি
জবি শিক্ষার্থীদের কাঁথা-বালিশ কর্মসূচি ঘোষণা
ঢাকা/হাসান/রাসেল