যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি দাবানলে জ্বলছে। টানা পাঁচ দিন ধরে দাবানলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এখনো ছয়টি দাবানল সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানলগুলোর একটি গতকাল শনিবার দিক পরিবর্তন করেছে। এতে নতুন করে ওই এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে আগুন নিয়ন্ত্রণে নতুন হুমকির মুখে পড়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

লস অ্যাঞ্জেলেসে এই দাবানলের সূত্রপাত হয় গত মঙ্গলবার। দাবানলে এখন পর্যন্ত ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। পুড়ে গেছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা। ধ্বংস হয়েছে প্রায় ১০ হাজার স্থাপনা। এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অগ্নিনির্বাপণকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি শুরু করেছেন। তবে মৃত্যুও বাড়তে পারে।

লস অ্যাঞ্জেলেসে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ এই দাবানল ছড়িয়ে পড়ার পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে ‘সান্তা অ্যানা’ নামের ঝোড়ো বাতাস। গত শুক্রবার রাত থেকে এই বাতাস অনেকটা কমে এসেছে। তবে শহরের পশ্চিমে জ্বলতে থাকা ‘প্যালেসেইডস’ নামের দাবানলটি নতুন দিকে অগ্রসর হওয়া শুরু করছে। লস অ্যাঞ্জেলেস ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা এরিক স্কট স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেল কেটিএলএকে বলেছেন, প্যালেসেইডস দাবানলটির পূর্বের অংশে আগুন উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটি দিক পরিবর্তন করে আরও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দাবানল সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

প্যালেসেইডস দাবানলটি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ার আগে সেটি নিয়ন্ত্রণে কিছুটা অগ্রগতির কথা জানিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। এ ছাড়া শহরের পূর্বে পাসাডেনা এলাকার কাছে ‘এটন’ নামের দাবানলটিও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানানো হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার রাতে প্যালেসেইডস দাবানল ৮ শতাংশ এবং এটন দাবানল ৩ শতাংশ নিয়ন্ত্রণে এসেছিল।

আরও পড়ুনমনে হলো এক টন ইট এসে পড়েছে, বললেন লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানলে বাবাকে হারানো মেয়ে১২ ঘণ্টা আগে

বড় এই দুটি দাবানলের আগুনে একত্রে লস অ্যাঞ্জেলেসের ৩৫ হাজার একর জায়গা পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টির পুলিশ কর্মকর্তা রবার্ট লুনা বলেছেন, আগুন থেকে বাঁচতে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার মানুষকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮০০ জনকে এলাকা ছাড়ার বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে। জারি করা হয়েছে কারফিউ।

ক্যালিফোর্নিয়ার আগুন নেভাতে এগিয়ে এসেছে প্রতিবেশী সাতটি অঙ্গরাজ্য। কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কানাডা থেকেও এসেছে সহায়তা। আগুন নেভাতে হেলিকপ্টার থেকে পানি ফেলছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পাহাড়ের গায়ে জ্বলতে থাকা আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক। সাধারণ সরঞ্জাম ও পাইপ থেকে পানি ছিটিয়েও চলছে আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে। বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৩২ কিলোমিটার পর্যন্ত নেমে আসছে। এটা আগের চেয়ে কম। ফলে আগুন নেভানোর কাজে ফায়ার সার্ভিসকর্মীদের সুবিধা হতে পারে। তবে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ ক্যাল ফায়ার জানিয়েছে, আগামী মঙ্গলবার বাতাসের গতি আবার বাড়তে পারে।

এদিকে গত শুক্রবার শহরের প্যাসিফিক প্যালেসেইডস এলাকায় পোড়া ঘরবাড়িতে অনেককে ফিরতে দেখা গেছে। এমনই একজন ৪৪ বছর বয়সী কেলি ফস্টার। নিজের ধ্বংস হওয়া বাড়িতে কিছু অক্ষত আছে কি না, তা দেখছিলেন তিনি। ফস্টার বলেন, এটি তাঁদের অনেক ভালোবাসার একটি বাড়ি ছিল। এমন আরেক বাসিন্দা ডেনিস ডস (৬৩) বলেন, ‘এখন সৃষ্টিকর্তাই আমাদের পথ দেখাবেন।’

আরও পড়ুনক্যালিফোর্নিয়ায় সবচেয়ে বড় ১০ দাবানলের ৮টিই গত পাঁচ বছরে১১ ঘণ্টা আগে

আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য সরবরাহকারী ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই দাবানলে এখন পর্যন্ত ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। আর দাবানলে মানুষ শুধু ঘরবাড়িই হারাননি; লাখ লাখ বাসাবাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। কালো ধোঁয়ায় দূষিত হয়েছে বাতাস। এতে শারীরিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন মানুষজন।

তবে দাবানলের পর আবার লস অ্যাঞ্জেলেস পুনর্গঠনের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, আগামী ছয় মাস লস অ্যাঞ্জেলেসের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য শতভাগ অর্থায়ন করবে মার্কিন সরকার।

আরও পড়ুনলস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের পেছনে কারণ কী, তদন্তকারীরা কী ভাবছেন৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দেবীগঞ্জে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে লেখা হয়েছে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান।

শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) সকাল থেকে পৌরসভার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এই লেখা সাধারণ মানুষের নজরে আসে। তবে, কারা এই স্লোগান লিখেছেন, তা কেউ দেখেননি।

পৌরসভার শহীদ আব্দুল মান্নান সড়ক সংলগ্ন উপজেলা পরিষদ চত্বর, নৃপেন্দ্র নারায়ণ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামের দেয়ালে লাল, কালো ও নীল রঙের কালি দিয়ে ‘জয় বাংলা’, ‘জয় শেখ হাসিনা’ এবং ‘শেখ হাসিনা তুমি আস্থা’- এমন স্লোগান লেখা হয়েছে।

এদিকে, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের অফিসিয়াল পেজ থেকে আজ দুপুর ১টায় দেবীগঞ্জের বিভিন্ন দেয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়। এ বিষয়ে জানতে স্থানীয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

দেবীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান সুমন বলেন, ‘নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রশাসনকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। রাতের আঁধারে দেয়ালে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লিখছে তারা। উপজেলা ছাত্রদলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সজাগ রয়েছে।"

প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পঞ্চগড় জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বী বলেন, ‍“গত ৫ আগস্টের পর শুধু দেবীগঞ্জ নয়, পুরো পঞ্চগড়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেবীগঞ্জ, বোদা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে এসব দেওয়াল লিখন লক্ষ্য করা গেলেও প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। এসব লেখা ’২৪ বিপ্লবের চেতনাকে ম্লান করার চেষ্টা করছে। যা রুখতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের প্রতি আহ্বান- তাদের (ছাত্রলীগ নেতাকর্মী) দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের অপতৎপরতা রুখে দিতে পঞ্চগড় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।”

দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোয়েল রানা মোবাইলে বলেন, “বিষয়টি আমাদের নজরে আসছে। এখনি কোনো মন্তব্য করতে পারছি না। বিষয়টি দেখছি আমরা।”

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ