সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে কোনো সরকারি সংস্থার দায় পেলে ওই সংস্থার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সরাসরি দায়ী করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, গাড়ির ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স না থাকার জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরাসরি দায়ী করা হবে। এসব মৃত্যুর দায়িত্ব তাঁদের ওপর আসবে এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইভাবে সড়কের কারণে হলে এর দায় পড়বে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ওপর। এমনকি পুলিশকেও দায় নিতে হবে গাফিলতির।

আজ শনিবার বনানীতে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ভবন পরিদর্শন ও নিরাপদ সড়ক–বিষয়ক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথাগুলো বলেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

দুর্ঘটনায় প্রাণহানির কোনো মূল্য হয় না উল্লেখ করে সড়ক উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, এরপরও দায় স্বীকারের অংশ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তিদের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

লাইসেন্স নবায়ন না করলে বাতিল

চালকের লাইসেন্স ও যানবাহনের ফিটনেস সনদ দেওয়ার প্রক্রিয়া অনেক জটিল উল্লেখ করে ফাওজুল কবির খান বলেন, এখন থেকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থাটা সহজ ও কার্যকরী করা হবে। এ জন্য প্রথমেই চালকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সরকার চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। লাইসেন্স ও ফিটনেস সনদ নবায়নের ক্ষেত্রে আগে থেকে বিআরটিএ গ্রাহককে অবহিত করবে। তখন সেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে কত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স ও ফিটনেস নবায়ন করতে হবে। যদি ওই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স নবায়ন না করা হয়, তাহলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে।

সড়ক উপদেষ্টা জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে চালকের লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে কী কী করতে হবে, কে করবে, কীভাবে করবে, কত দিনের মধ্যে করবে, সেটি করতে কী কী প্রয়োজন হবে, এ বিষয়ে একটি ম্যাট্রিক্স দাঁড় করানো হয়েছে। সেটা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হবে।

বিআরটিএর সেবা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি

বিআরটিএ সেবার উন্নতির জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেওয়ার পর কিছুটা উন্নয়ন ঘটেছে বলে জানান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, তবে তা কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এবার দ্রুত সেবার উন্নতি না করতে পারলে সংস্থাটিকে বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এক সভায় এক মাসের মধ্যে বিআরটিএকে সেবার মান উন্নয়নে সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সড়ক উপদেষ্টা। সেই সময়সীমা শেষের দিকে হওয়ায় সংস্থাটির কী উন্নয়ন হয়েছে, আজকের সভা শেষে তা উপদেষ্টার কাছে জানতে চান সাংবাদিকেরা। এর জবাবে তিনি বলেন, বিআরটিএকে এক মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। গ্রহণযোগ্যভাবে উন্নতি না হলেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

এ সময় উপদেষ্টা জানান, তিনি বিআরটিএর কাজ প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণে রাখবেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চলমান, এটা আরও বাড়ানো হবে।

সড়ক দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি রোড সেইফটি ফাউন্ডেশন সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে। গত বছর সারা দেশে ৭ হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২ হাজারের বেশি, যা এর আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যায়নি। এর দায় নিচ্ছেন তিনি।

বর্তমানে সাড়ে চার লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকে আছে জানিয়ে সড়ক উপদেষ্টা বলেন, আগামী মার্চের মধ্যে সেগুলো গ্রাহককে দেওয়া হবে। তিন মাসের জন্য শিক্ষানবিশ হিসেবে চালকের লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু অনেকে এরপর স্থায়ী লাইসেন্স নেন না। শিক্ষানবিশ লাইসেন্স তিন মাস পর স্থগিত থাকবে এবং স্থায়ী লাইসেন্স না নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সরকার বেশি দামে ধান কেনায় বাজারে দাম বাড়তে পারে: ভূমি উপদেষ্টা

খাদ্য ও ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেছেন, অন্য বছরের চেয়ে এবার কৃষকের কাছ থেকে বেশি দামে ধান কিনছে সরকার। অতীতে কেউ এই দাম দেয়নি। কৃষকরা এবার ধানের সঠিক মূল্য পেয়েছেন। এ জন্য বাজারে ধান-চালের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলা খাদ্যগুদামে বোরো ধান সংগ্রহ কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। 

সরকারের কাছে ধান বিক্রিতে সিন্ডিকেট নিয়ে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, গত আমন মৌসুমে ধান কেনায় কোনো সিন্ডিকেট কাজ করতে পারেনি। এবারও পারবে না। এমন হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে ধান বিক্রির টাকা সরাসরি কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে দেওয়া হবে। গুদামে ধান দিতে এসে কোনো কৃষক হয়রানির শিকার হলেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় অন্তর্বর্তী সরকার কতদিন দায়িত্বে থাকবে– জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সেটা প্রধান উপদেষ্টা জানেন। এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই। আমাকে খাদ্য ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের বিষয়ে প্রশ্ন করতে পারেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হুমায়ুন কবির, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা।

চলতি মৌসুমে সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলা থেকে সরকার ১৪ হাজার ৬৪৫ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। আর সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করা হবে ১৩ হাজার ৮১৬ টন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ