চুয়াডাঙ্গা শহরে একটি কবরস্থানের ভেতর থেকে পিঠমোড়া দিয়ে হাত, পা ও মুখ বাঁধা এক তরুণকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার দুপুরে ৯৯৯ নম্বর থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সদর থানা-পুলিশ ওই তরুণকে উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করে।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেহবুবা মুস্তারিন বলেন, অচেতন ওই তরুণের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। অবস্থা অনেকটাই আশঙ্কামুক্ত।

জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক শফিকুর রহমান বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী অচেতন ওই তরুণের নাম শরিফুল ইসলাম (২১)। তিনি কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের ভিলিজারপাড়া গ্রামের ফজল করিম ও হোসনে আরা বেগম দম্পতির ছেলে। শরিফুলের পরিবারকে মুঠোফোনে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।

শফিকুর রহমান আরও বলেন, সেনাসদস্যদের মতো ছোট করে চুল কাটা অচেতন ওই তরুণের সঙ্গে থাকা ব্যাগের ভেতরে সেনাবাহিনীর পোশাক ও ব্যাচ পাওয়া গেছে। তবে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শরিফুল তাঁদের কোনো ইউনিটের সদস্য নন। জ্ঞান ফিরে পেলে তাঁর চুয়াডাঙ্গায় আসা এবং হাত, পা ও মুখ বাঁধার ঘটনা ও অচেতন হওয়ার বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে।

পুলিশ, সদর হাসপাতাল ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের স্টেশন রোডে অবস্থিত জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানের ভেতর এক তরুণকে পিঠমোড়া দিয়ে হাত, পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানালে তা সদর থানা-পুলিশকে অবগত করা হয় এবং সদর থানা-পুলিশের একটি দল কবরস্থানের ভেতরের বাগান থেকে অচেতন অবস্থায় ওই তরুণকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেয়।

বিকেলে হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অচেতন অবস্থায় ওই তরুণ শয্যায় শুয়ে আছেন। শরীরে স্যালাইন চলছে। পাশে জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় সেনাবাহিনীর দুজন, শফিকুর রহমানসহ পুলিশ সদস্যরা অবস্থান করছেন। চিকিৎসক মেহবুবা মুস্তারিন নার্সদের নিয়ে তদারক করছেন।

শরিফুল ইসলামের ভাই আবু তালেব মুঠোফোনে বলেন, শরিফুল সম্প্রতি সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন বলে বাড়িতে জানিয়েছেন। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়ার কথা বলে মাসখানেক আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। এ জন্য মা-বাবার কাছ থেকে অন্তত ১০ হাজার টাকা নেন। পরে মুঠোফোনে নানা খরচের কথা বলে আরও টাকা নেন। তবে চুয়াডাঙ্গায় কেন গেছেন এবং কার সঙ্গে গেছেন, সে বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামুনের মরদেহ ছয় মাস পর কবর থেকে উত্তোলন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট গুলিতে নিহত মামুন খন্দকারের (৪৩) মরদেহ আদালতের নির্দেশে ৫ মাস ২৬ দিন পর কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহতের গ্রামের বাড়ি উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ি পারিবারিক কবরস্থান থেকে এই মরদেহ উত্তোলন করা হয়।

এ সময় মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলাম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার চঞ্চল গোলদার, থানা পুলিশ, জেলা হাসপাতালের ডোম চয়ন ও মামলার বাদী নিহতের স্ত্রী সাথী খন্দকার উপস্থিত ছিলেন।

নিহত মামুন খন্দকার মঠবাড়িয়া উপজেলার বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের মৃত মজিবর খন্দকারের ছেলে। তার দুই ছেলে দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় গার্মেন্টসের ব্যবসা করতেন।

নিহতের স্ত্রী সাথী জানান, তার স্বামী গত ৫ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া বাইপাইল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে স্বৈরাচারী সরকারের লোকজনের হাতে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে সাভার এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট সেখানে তার মৃত্যু হয়। পরে ৮ আগস্ট পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বেতমোর রাজপাড়া গ্রামের খন্দকার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তিনি গত ২২ আগস্ট ঢাকার আশুলিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

নিহত মামুন খন্দকারের কলেজ পড়ুয়া ছেলে খন্দকার মো. হেলাল (১৮) জানান, আন্দোলনে তার বাবা নিহত হবার পর তার বাবার মরদেহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়। মা আদালতে তার বাবার লাশের ময়নাতদন্তের আবেদন করলে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালত, ঢাকা এর ১৭৪৮ নং স্মারকের নির্দেশে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়। তিনি আরও জানান, তার বাবা বাইপাইল তাওহিদা ইন্টারন্যাশনাল বিডি নামে একটি ব্যবসা পরিচালনা করতেন।

মঠবাড়িয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, আদালতের নির্দেশ পেয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলামের নেতৃত্বে লাশ উত্তোলন করে পিরোজপুর জেলা মর্গে পাঠানো হয়।

মঠবাড়িয়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট রাইসুল ইসলাম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গিয়ে নিহত মামুন খন্দকারের নিহতের ঘটনায় করা মামলায় মরদেহ আদালতের নির্দেশে কবর থেকে তোলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ছাত্র আন্দোলনে নিহত মামুনের মরদেহ ছয় মাস পর কবর থেকে উত্তোলন