দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার: রিজভী
Published: 11th, January 2025 GMT
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকার ক্রমান্বয়ে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, নতুন করে শতাধিক পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তে সাধারণ মানুষের ওপর আরও চাপ বাড়বে। ৫ টাকার জায়গায় ১৫ টাকা কর বসানো সরকারের ভুল নীতি। এমন সিদ্ধান্তে ইউনূস সরকারের প্রতি জনগণের আস্থায় চিড় ধরতে পারে।
আজ শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী এ কথা বলেন। সদ্য প্রণীত কয়েকটি পাঠ্যবইয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ‘ভুল তথ্য’ এবং ‘ইতিহাস বিকৃতি’ সম্পর্কে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করে বলেন, নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতির নতুন বইয়ে এনসিটিবি ভুল তথ্য তুলে ধরেছে। ফ্যাসিবাদের পতনের পরও পাঠ্যবইয়ে পতিত আওয়ামী লীগকে ‘হিরো’, আর বিএনপিকে হেয়প্রতিপন্ন করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি নতুন পাঠ্যবইয়ে যেসব জায়গায় আওয়ামী বন্দনা করা হয়েছে, তা দ্রুত সংশোধন করার দাবি জানান। তিনি বলেন, বিএনপির বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবেই আওয়ামী দোসররা ইতিহাস বিকৃতি করছে।
‘নতুন পাঠ্যবইয়ে এখনো আওয়ামী বন্দনা’রিজভী বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষে পরিমার্জিত, নতুন করে ছাপানো নবম-দশম শ্রেণির “পৌরনীতি ও নাগরিকতা” বইয়ের ৭৩ নম্বর পৃষ্ঠার “গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন ব্যবস্থা” অধ্যায়ে “বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ” সম্পর্কে হাসিনার অলিগার্করা লিখেছে, আওয়ামী লীগ এ দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম রাজনৈতিক দল। আর বিএনপিকে নিয়ে অতিকথন, অপপ্রচার আর কুৎসা রটানোর বিরতিহীন যে ধারাভাষ্য চালানো হয়েছে শেখ হাসিনার ১৬ বছরে, তারই প্রতিফলন এখনো আমরা দেখছি পাঠ্যপুস্তকে।’
রিজভী আরও বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে ‘সাবেক রাষ্ট্রপতি’র পরিবর্তে ‘সাবেক সেনাপ্রধান’ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের ‘সামরিক শাসনামলে’ ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ভেতরে-বাইরে ঘাপটি মেরে বসে থাকা আওয়ামী ভূতেরা শেখ হাসিনারই মিথ্যা বয়ান লিপিবদ্ধ করেছে পাঠ্যপুস্তকে।
‘বিএনপি সেনাছাউনিতে গঠিত দল নয়’বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, দেশের জনগণের ভালোবাসায় ধন্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিরুদ্ধে একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তকেও বিএনপি সম্পর্কে ভুল তথ্য সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। আমরা রাজনীতিসচেতন দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিতে চাই, বিএনপি সেনাছাউনিতে জন্ম হওয়া কোনো দল নয়। সামরিক প্রশাসক কিংবা সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নয়, বরং ঢাকার রমনা রেস্তোরাঁয় এক সংবাদ সম্মেলনে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যখন বিএনপি গঠনের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তখন তিনি ছিলেন দেশের নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। সুতরাং বিএনপি সেনাছাউনিতে গঠিত হয়েছে, এ তথ্য ইতিহাস বিকৃতি ছাড়া কিছুই নয়।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, পাঠ্যবইয়ে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা জরুরি, তৎকালীন প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে একদলীয় বাকশাল গঠন করেছিলেন। এরপর ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের পটপরিবর্তনে দেশে সামরিক শাসন জারি করে খন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এ সময় দেশে কোনো রাজনৈতিক দল ছিল না। এমনকি একদলীয় বাকশালের নাম নেওয়ারও কেউ ছিলেন না। এমন পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমান দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ‘রাজনৈতিক দলবিধি ১৯৭৬’ জারি করেন। কমপক্ষে ১৯টি রাজনৈতিক দলকে দেশে নিজ নামে রাজনীতি করার অনুমতি দেওয়া হয়। শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের পথচলা। এসব তথ্যপ্রমাণে স্পষ্ট, জিয়াউর রহমান আগে নিজে দল গঠন করেননি। বরং অন্য সব দলকে দেশে নিজ নামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তন করে স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে যখন বিএনপি গঠনের ঘোষণা দেন, তখন তিনি আর সেনাপ্রধান নন, বরং তিনি ছিলেন জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট।
রিজভী বলেন, এসব তথ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট, বিএনপি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে ক্ষমতা নয়, বরং দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নিবিড় সম্পর্ক ছিল। এসব সত্য ইতিহাস কেন এখন পাঠ্যপুস্তকে সন্নিবেশিত হবে না।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, পতিত স্বৈরশাসকের অনুচরেরা হাসিনা পালানোর পর ভীষণ মনঃকষ্ট নিয়ে দিনরাত চক্রান্তে মেতে থাকছে। তারাই পাঠ্যবইয়ে আওয়ামী লীগের শ্রেষ্ঠত্ব, স্তুতিবন্দনা আর বিএনপি সেনাছাউনিতে জন্ম বলে হেয়প্রতিপন্ন-বিতর্কিত করার মাধ্যমে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মগজধোলাইয়ের প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। তারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করে চলেছে ছদ্মবেশে। তাদের পালিয়ে যাওয়া ‘গডমাদার’ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, কেন্দ্রীয় নেতা সেলিমুজ্জামান সেলিম, আসাদুল করিম শাহীন, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, তারিকুল আলম তেনজিং প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোনো মহামানবকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য মানুষ আন্দোলন করেনি: আমীর খসরু
কোনো মহামানবকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য দেশের মানুষ আন্দোলন-সংগ্রাম করেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।
তিনি বলেন, কোনো মহামানব কোনো দেশের গণতন্ত্রের সমাধান দেবে তার জন্য দেশের জনগণকে অপেক্ষা করতে হবে, এটা বিশ্বাস করার কারণ নেই।
এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় ন্যাপ ভাসানীর সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি। ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিকাল ৪টা ২০ মিনিটে আমজনতার দলের সঙ্গে বৈঠকে করে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটি। আমজনতার দলের আহ্বায়ক কর্নেল অব. মিয়া মশিউজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন বিএনপির নেতারা।
বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন।
আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্যের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আমীর খসরু বলেন, মানুষ বলতে কারা? আমার বুঝতে একটু অসুবিধা হচ্ছে। বাংলাদেশে প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি, যারা জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে। যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রাস্তায় লড়াই করেছে, আমাদের সঙ্গে যারা রাস্তায় ছিল, ইতোমধ্যে প্রায় ৫০টি দল, পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচনের জন্য।
তিনি আরও বলেন, সংস্কারের জন্য যে কথাগুলো বলা হয়, সংস্কারের ব্যাপারে যেখানে ঐকমত্য হবে- সেই সংস্কারগুলো দ্রুত করে নির্বাচন কমিশনকে বলা হোক, নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করে রোডম্যাপ দিয়ে ভোটের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তো জনগণ বলতে কারা?
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, এখন জনগণ বলতে যদি কোনো একটি বিশেষ গোষ্ঠী, সুবিধাভোগী- যারা গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গিয়ে, জনগণের ভোটাধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে গণতন্ত্রকে সংস্কারের মুখোমুখি করছে! এটা তো কারও বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কারণ নেই। ১৬ বছরের যুদ্ধটা ছিল গণতন্ত্রের জন্য, দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য। যে সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবে, তারা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে। সেটা যে সরকারই হোক।