লাইসেন্স দেওয়ার মাধ্যমে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বৈধতা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন রিকশাচালকেরা। পাশাপাশি রাস্তায় পুলিশ ও স্থানীয় চাঁদাবাজাদের চাঁদাবাজি ও হয়রানি বন্ধে অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ শনিবার সকালে জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় অটোরিকশাচালকেরা এসব দাবি জানান। রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধের তুরাগ হাউজিংয়ের একটি রিকশা গ্যারেজে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় রিকশাচালক ফয়সাল বলেন, রিকশাচালক ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স দিয়ে বৈধতা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তায় নামলে রিকশাচালকদের কাছ থেকে যে চাঁদা নেওয়া হয়, তাঁদের হয়রানি করা হয়, সেগুলো বন্ধ করতে হবে।

আরেক রিকশাচালক ইলিয়াস আলী বলেন, কষ্ট করে রিকশা চালিয়েও শান্তিতে থাকা যায় না। মোড়ে মোড়ে ১০-২০ টাকা করে দিতে হয়। হয়রানি-অত্যাচার করা হয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাওয়া নতুন বাংলাদেশ পেয়েছেন উল্লেখ করে তিনি এ বাংলাদেশে অত্যাচার, হয়রানি থেকে মুক্তি চান।

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে আহত রিকশাচালক রফিক বলেন, রিকশাচালকেরা আন্দোলনে ছাত্র-জনতার সঙ্গে ছিলেন। কিন্তু রিকশাচালকদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন এখনো চলছে। রিকশাচালকদের সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার মালিক মালেকা বেগম বলেন, ‘রাস্তায় অটো গেলে সার্জেন্ট (পুলিশ) ধরে। টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনতে হয়। আমরা এসব সমস্যার সমাধান চাই।’

রিকশাচালকদের দাবিগুলো শোনার পর জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী অটোরিকশাচালকদের হয়রানি বন্ধে উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘রিকশাচালকদের সমস্যা সমাধান করুন, চাঁদাবাজি বন্ধ করুন।’

এ সময় নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে সব শ্রেণি-পেশার অধিকার নিশ্চিতে, বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের আরামের জন্য রাজনীতি করতে চাই। সেই দিকনির্দেশনা পেতেই শ্রমজীবী ও রিকশাচালকদের সঙ্গে এ মতবিনিময়।’

মতবিনিময় সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ঋয়াজ মোর্শেদ, মোহাম্মদপুর এলাকার নাগরিক কমিটির সদস্যসহ অর্ধশতাধিক রিকশাচালক উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় প্রথম ধাপে বিএনপি-জামায়াতের ২৪১টি ‘রাজনৈতিক’ মামলা প্রত্যাহার

বগুড়ায় বিগত সরকারের আমলে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা ‘রাজনৈতিক’ মামলা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রথম ধাপে আদালতে বিচারাধীন ২৪১টি মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ ছাড়া দ্বিতীয় ধাপে ৩২৮টি মামলা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন শাখা-১ প্রথম ধাপে ২৪১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দিয়ে ৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার গেজেটের চিঠি বগুড়ায় আসে বলে জানিয়েছেন বগুড়া জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল বাছেদ।

পিপি আবদুল বাছেদ প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক ৭৬৬টি মামলা আদালতে এখনো বিচারাধীন। মামলাগুলো প্রত্যাহারের সুপারিশ করে আইন ও বিচার মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর অনুবিভাগের উপসলিসিটরের কাছে পাঠানো হয়। সেখান থেকে যাচাই-বাছাই শেষে মামলা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন শাখা-১ প্রথম ধাপে ২৪১টি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়ে ৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে। দ্বিতীয় ধাপে ২০ এপ্রিল সচিবালয়ে আইন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে গঠিত কমিটির ১১তম সভায় বগুড়ার আরও ৩২৮টি মামলা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত সরকারবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বগুড়ায় বিএনপি-জামায়াতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এক হাজারের বেশি মামলা হয়। এর মধ্যে বেশ কিছু মামলার রায়ে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন নেতা-কর্মীরা। আদালতে বিচারাধীন ছিল ৭৬৬টি মামলা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়। এতে রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সভাপতি ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে সদস্যসচিব করে পুলিশ সুপার ও সরকারি কৌঁসুলিকে (পিপি) সদস্য করে একটি কমিটি করা হয়। কমিটি ওই ৭৬৬টি মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে।

তবে এক–এগারো সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি থেকে ২০০৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন পর্যন্ত দায়ের হওয়া সব মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় প্রত্যাহারের দাবি করেছেন বগুড়ার বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তবে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ