সাগরকন্যা কুয়াকাটা, বাংলাদেশে একমাত্র সমুদ্র সৈকত যেখান থেকে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উভয়ই দেখা যায়। তাই সারা বছর দেশি-বিদেশি হাজারো পর্যটকের আনাগোনা কুয়াকাটার সমুদ্র সৈকতে। কিন্তু কুয়াকাটা যেন পচা মাছের আখড়া। পর্যটকদের অনভিজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে পচে যাওয়া মাছগুলোই তাজা মাছ হিসেবে বিক্রি করা হচ্ছে। পর্যটকদের চোখে ধুলো দিয়ে তাজা মাছ বলে পচা মাছ বারবিকিউ কিংবা ফ্রাই হিসেবে পরিবেশন করছেন এখানকার এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী।

মাছগুলো রান্নার পর দুর্গন্ধ ঢাকতে ব্যবহৃত হচ্ছে অতিরিক্ত পরিমাণে টেস্টিং সল্ট, আজিনামটো, সুগন্ধির মতো মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর পদার্থ। যা খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা। চোখের সামনেই বারবিকিউ কিংবা ফ্রাই করে দেওয়া হবে এই ছলনার সুযোগ নিয়ে পর্যটকদের পরিবেশন করা হচ্ছে এসব পচা মাছ। বাস্তবে এসবের আড়ালে প্রতিটা স্তরে স্তরে মিশে আছে প্রতারণা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সাজিয়ে রাখা মাছগুলো এতটাই পুরোনো থাকে যে মাছের চোখ পর্যন্ত শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে আসে। দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য মাছগুলো প্রদর্শন করা হয় বাল্বের উজ্জ্বল আলোর নিচে, কোনো বরফের ব্যবহার ছাড়াই। ফলে তাপ ও আলোর উত্তাপে আরো দ্রুত পচন শুরু হয় মাছগুলোতে।

অধিকাংশ মাছই যে পচা তা বোঝা যায় কয়েকটি নমুনা দেখলেই। মাছগুলোর চোখ বেরিয়ে এসেছে শরীর থেকে। কানকো ফ্যাকাশে কিংবা পুরোপুরি কালো। কোনোটার আবার পেট থেকে বেরিয়ে আসছে নাড়িভুঁড়ি। আঁশওয়ালা মাছগুলোর আঁশগুলো অবিন্যস্ত, খুলে খুলে পড়ছে। এগুলো নির্দেশ করে মাছগুলো অনেক পুরোনো। এই পচা মাছের দামও চাওয়া হয় আকাশচুম্বী। এ ছাড়াও অসাধু ব্যবসায়ীরা মাছগুলো এমন করে প্রদর্শন করে কিংবা মাছগুলো সম্পর্কে বর্ণনা করে যে পর্যটকেরা বিশ্বাস করতে বাধ্য হয় যে এগুলো তাজা মাছ।

পর্যটকেরা এভাবে প্রতারিত হলে সমুদ্র সৈকতগুলোতে ঘুরতে আসতে নিরুৎসাহিত হবে। এতে আমাদের পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পচা মাছ চেনার অনেক উপায় আছে। যেমন পচা মাছের চোখের চারপাশ বিবর্ণ, সাদা ও ঘোলাটে হয়ে যাবে। ফরমালিন দিয়েও চোখের রঙের পরিবর্তন সম্ভব না। ফ্রেশ মাছের কানকো হবে উজ্জ্বল লাল কিংবা গারো মেরুন। কানকোতে রং ব্যবহার করা হয়েছে কিনা তা মাছের কানকোতে হাত দিয়ে যাচাই করা যেতে পারে। পচা মাছের শরীরে চাপ দিলে তা পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসবে না, চাপ দেওয়ার অংশ দেবে যাবে।

পর্যটকদের সচেতন হওয়ার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উচিত নিয়মিত এ সকল ভ্রাম্যমাণ দোকানগুলোকে মনিটরিং করা এবং এ সকল লোভী ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনা। এর মাধ্যমে সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে আসা পর্যটকেরা এই প্রতারণার থেকে কিছুটা হলেও রেহাই পাবে। পাশাপাশি তাদের পছন্দনীয় তাজা সামুদ্রিক মাছের স্বাদ গ্রহণ করতে পারবে। পর্যটন খাত যেহেতু আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, তাই প্রশাসনের এ বিষয়ে নজরদারি অতীব জরুরি।

প্রজ্ঞা

শিক্ষার্থী, অর্থনীতি বিভাগ

ইডেন মহিলা কলেজ

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সেন্টমার্টিনে পর্যটক বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের হতাশা 

আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের একমাত্র প্রবালসমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পর্যটক যাতায়াত সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৩১ জানুয়ারির পর পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ সেখানে যেতে পারবে না।

এমন সিদ্ধান্তে দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা ও পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পর্যটন মৌসুমের মাঝপথে এমন নিষেধাজ্ঞা তাদের জন্য বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন তারা।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জানানো হয়েছে, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মাসের জন্য অর্থাৎ অক্টোবর পর্যন্ত সেন্টমার্টিনে পর্যটকদের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে। এ কারণে ৩১ জানুয়ারির পর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।

আরো পড়ুন:

সাজেকে গাড়ি উল্টে ৬ পর্যটক আহত

পঁচিশের সূর্যোদয় দেখা হলো না কুয়াকাটার পর্যটকদের

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচল ও পর্যটন নিয়ন্ত্রণ কমিটির আহ্বায়ক এবং কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকরা সেন্টমার্টিনে যেতে পারবেন। এরপর আর কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ চলবে না।

সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা এ সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছেন। হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক সমিতির সভাপতি এম এ রহিম জিহাদী জানান, অতীতে এমন পরিস্থিতি কখনো হয়নি। যদি পর্যটক আসা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দ্বীপের হাজার হাজার মানুষ সংকটে পড়বে। মানবিক বিবেচনায় অন্তত ফেব্রুয়ারির শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের আসার সুযোগ দেওয়া উচিত।

সি-ক্রুজ অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুরও একই দাবি জানিয়ে জানান, অন্তত ফেব্রুয়ারি মাসটা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হোক। এতে ব্যবসায়ীরা কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন। 

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মালেক জানান, শুধু দুই মাসের আয় দিয়ে পুরো বছর চলা সম্ভব নয়। অন্তত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দ্বীপে পর্যটক প্রবেশের অনুমতি চান তিনি। 

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসাইন সজীব জানান, ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করবে। এরপর আর কোনো জাহাজ সেন্টমার্টিনে যাবে না। তবে সরকার যদি সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সেন্টমার্টিনের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা ও অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন নিয়ন্ত্রণের জন্যই মূলত এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে নাফ নদীতে নাব্য সংকট ও মিয়ানমার সীমান্তে সংঘর্ষের কারণে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথ বন্ধ রাখা হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার থেকে ছয়টি জাহাজ পর্যটক পরিবহন করছিল, যা ৩১ জানুয়ারির পর বন্ধ হয়ে যাবে।

ঢাকা/তারেকুর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেন্টমার্টিনে পর্যটক বন্ধের সিদ্ধান্তে ব্যবসায়ীদের হতাশা