‘আমার স্বামী পুলিশের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কী হইব আমরার’
Published: 11th, January 2025 GMT
‘২৪ ঘণ্টার ভিতরে আমি আমার স্বামীর খুনিরারে গ্রেপ্তার দেখতে চাইছিলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত হেরা (পুলিশ) খুনিরারে ধরতে পারতাছে না। আমার স্বামী পুলিশ প্রশাসনের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কী হইব আমরার? কিছু বলার নাই।’
আজ শনিবার দুপুরে এভাবে আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন নেত্রকোনার দুর্গাপুরে দুর্বৃত্তের এলোপাতাড়ি কোপে খুন হওয়া পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) শফিকুল ইসলামের স্ত্রী রাবিয়া খাতুন।
চণ্ডীগড় ইউনিয়নের নয়াগাঁও এলাকায় শফিকুলের গ্রামের বাড়িতে গেলে রাবিয়া খাতুন চোখের পানি মুছতে মুছতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার স্বামী এমন কোনো খারাপ কাজই করেন নাই, এমন কোনো অপরাধই করে নাই যে একজন দাঁড় করাইয়া কইব, “ভাই, আপনি এই অপরাধটা কের লাইগা করলাইন?” ক্যান এমন হইল? কারা আমার স্বামীরে নির্মমভাবে হত্যা করল? আমি কিছুই বুঝতে পারতাছি না।’
রাবিয়া খাতুন বলেন, ‘দুই দিন গেছে গা, পুলিশ অহনও খুনিরারে ধরতে পারতাছে না। এহন হেরা (পুলিশ) আইসা উল্টা আমারে জিগায় আপনি কাউরে সন্দেহ করেন, আমি সন্দেহ করতাম কী? সিসিটিভি ফুটেজে সরাসরি দেখা যাইতেছে তিন–চারডা মানুষ তারে কোবাইতাছে। লোকটা দৌড় দিয়াও রক্ষা পাইছে না, মারছে। একটা পথচারী ঘটনার সময় দৌড় দিছে। দৌড় মারা লোকটারেও তো ধইরা জিগান যায়, তারা এটাও পারছে না। আমার স্বামী পুলিশ প্রশাসনের লোক হইয়াও যদি সঠিক বিচার না পায়, কী করব, আমার কিছু বলার নাই। তিন ছেলেসন্তান লইয়া আমার অহন কী হইব। আল্লাহ, আমারেও তুমি লইয়া যাও।’
শফিকুল ইসলামের বৃদ্ধ বাবা রফিকুল ইসলাম সন্তানহারানোর শোক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেডা খুবই ভালো আছিল। কোনো দিন কারও সাথে ঝগড়া-বিবাদ করত না। নিরীহ ছেলেডারে এইভাবে কোপাইয়া মারব, এইডা কোনো দিনও ভাবতে পারছি না। বাপ হইয়া ছেলের এমন মৃত্যু দেখতে হেইব, তা কল্পনাও করছি না কোনো দিন। আমার ছেলেরে তো কোনো দিন ফিরইরা পাইতাম না। কিন্তু আমি চাই, আমার ছেলের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আইন্না ফাঁসি দেওয়া হোক।’
আরও পড়ুননেত্রকোনায় ছুটিতে বাড়িতে আসা এসআইকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা০৯ জানুয়ারি ২০২৫স্থানীয় লোকজন ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শফিকুল ইসলাম জামালপুর পুলিশ লাইনসের বেতারে কর্মরত ছিলেন। গত বুধবার তিনি ছুটি নিয়ে দুর্গাপুরের বাগিচাপাড়া বাসায় যান। এই ছুটিই যে তাঁর জীবনের শেষ ছুটি, তা কখনো কেউ ভাবেননি। শফিকুল গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়ে বাজারে যান। ফেরার পথে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে দুর্গাপুর পৌর শহরের উকিলপাড়া এলাকায় পান মহলসংলগ্ন একটি গলিতে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। দুর্বৃত্তদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ডান পায়ের গোড়ালির অংশ প্রায় আলাদা হয়ে যায়। পরে সর্বশেষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাত সাড়ে নয়টায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত শুক্রবার অজ্ঞাতনামা ছয়জনকে আসামি করে তাঁর বাবা হত্যা মামলা করেন। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িত কাউকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়নি।
এদিকে আজ শনিবারও নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। এর আগের দিন গতকাল শুক্রবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আবুল কালাম আযাদ, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) ময়মনসিংহের পুলিশ সুপার মো.
পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঘটনা তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশের একাধিক দল মাঠে কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনসহ জড়িত ব্যক্তিদের আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হব। এসআই হত্যায় চারজন অংশ নিয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছে। গোপনীয়তার স্বার্থে আমরা এখনই তাঁদের নাম বলছি না।’
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
রাজধানীসহ ৭ জেলায় সংঘাত-ভাঙচুর, গুলিবিদ্ধসহ আহত ২৭
রাজধানীসহ ৭ জেলায় বিভিন্ন ইস্যুতে মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সারা দিন অবরোধ, ভাঙচুর, সংঘাত-সংঘর্ষ হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ২৭ জন আহত হয়েছে।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসনের দাবিতে অনিদিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে। এতে রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা রেলের অফিস ভাঙচুর এবং কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করা হয়।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পাইকারি আড়তের দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘাত হয়েছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
আরো পড়ুন:
প্রমীলা ফুটবল টুর্নামেন্ট নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ৭
বাস শ্রমিকদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, আহত ৩
হাফভাড়া না নেওয়ার জেরে বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এতে দুইজন ছাত্র আহত হয়েছে।
ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মবিরতির কারণে যশোরের পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। গ্রাহকের তেলের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে না। অনেক পাম্প বন্ধ হয়ে গেছে। এতে যানবাহনের মালিক ও যাত্রীরা বিপাকে পড়েছে।
বরিশাল
হাফভাড়া না নেওয়ার জেরে বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় তিনজন আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বরিশালের রূপাতলী বাসটার্মিনাল এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। আহত বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা হলেন, সাব্বির আহমেদ, রাফি ও রিয়াজ।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আজ বিকেলে বিএম কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের এক ছাত্রী বরিশাল-ঝালকাঠি সড়কে যাতায়াতকারী একটি বাসের হেলপারকে হাফভাড়া নিতে বলেন। বাসের হেলপার হাফ ভাড়া না নিয়ে উল্টো ওই ছাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ঘটনাটি জানতে পেরে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা টার্মিনালে গিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।
বিএম কলেজ শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন, “খবর পেয়ে আমরা সড়ক অবরোধ করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলাম। এ বিষয়ে বাস টার্মিনাল সংশ্লিষ্ট কেউ আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেনি। উল্টো শ্রমিকরা ধারালো অস্ত্র ও লাঠি নিয়ে আমাদের ধাওয়া দেয়। এর আগে আমাদের তিন শিক্ষার্থীকে মারধর করা হয়েছে। মারধরের ঘটনায় জড়িত শ্রমিকদের বিচার ও হাফ ভাড়া নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।”
রূপাতলী বাস মালিক সমিতির সভাপতি জিয়া উদ্দিন সিকদার বলেন, “হামলা-ভাঙচুর কিংবা সড়ক অবরোধ করে জনগণের ভোগান্তি না করে বাস স্টাফ ও মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হত। জনদুর্ভোগ হতো না।”
বরিশাল ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক বিদ্যুৎ চন্দ্র দে বলেন, “শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান।”
বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, “শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বাস শ্রমিকদের ঝামেলা হয়েছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
রেলকর্মীদের কর্মবিরতির মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকারুটে বনলতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যায়নি। ফলে ঢাকা গমনেচ্ছুরা টিকিটের টাকা ফেরত পেতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনে অবস্থান করেন। পরে সেখানে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসনের দাবিতে অনিদিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখেছে রেলকর্মীরা। ফলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। ভোর ৬টার দিকে ঢাকারুটে যাত্রী নিয়ে বনলতা ট্রেনটি ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। রেলকর্মীদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেনটিতে যাত্রী পরিষেবা বন্ধ আছে।
স্থানীয়রা জানান, বনলতা ট্রেনের যাত্রীরা ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকেটে কেটেছিল। ট্রেনটি ঢাকা ছেড়ে না যাওয়ায় যাত্রীরা ক্ষুব্ধ হয়। একপর্যায়ে টাকাগুলো ফেরত চাইলে গেলে বিক্ষুব্ধরা স্টেশন মাস্টারের রুমে গিয়ে হট্টগোল করেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার ওবায়দুল্লাহ জানান, ট্রেনের যাত্রীরা টিকিটের টাকা ফেরতের দাবি নিয়ে এসেছিল। তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে অনেকে টাকা ফেরত নিয়ে চলে গেছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মো. রইস উদ্দিন জানান, বনলতা ট্রেনের যাত্রীরা টিকিটের টাকা ফেরত চেয়ে স্টেশনে ভিড় করেছিল। সেখানে একটু উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বর্তমানে স্টেশন এলাকা স্বাভাবিক রয়েছে।
রাজশাহী
রেলওয়ের রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে ট্রেন বন্ধ থাকায় রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে ভাঙচুর চালিয়েছেন ক্ষুব্ধ যাত্রীরা। পরে যাত্রীরা বিক্ষোভ করে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে বিকল্প পথে রাজশাহী ছাড়ছেন।
মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে স্টেশনে বিক্ষোভ-ভাঙচুর করেন কয়েকশো যাত্রী। সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত এই বিক্ষোভ ও ভাঙচুর চলে।
ক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনে টিটিদের একটি কক্ষের চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। এ সময় অন্য কক্ষগুলোর দরজা তালাবদ্ধ ছিল। এছাড়াও যাত্রীরা স্টেশনে পেতে রাখা কিছু চেয়ার ভাঙচুর করেন। পরে সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা আসার পর ক্ষুব্ধ যাত্রীরা শান্ত হন। পরে টিকিটের টাকা ফেরত নিয়ে তারা স্টেশন ত্যাগ করেন।
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক ময়েন উদ্দিন বলেন, “যারা কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছিলেন, তাদের কাউন্টার থেকেই টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। আর যারা অনলাইনে টিকিট কাটেন, তাদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এখন স্টেশনে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান করছেন। পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “সোমবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতির কারণে ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার ভোর পর্যন্ত রাজশাহী থেকে কোনো ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার ছিল না। তবে মঙ্গলবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন গন্তব্যের ছয়টি ট্রেন ছিল। এসব ট্রেন ছেড়ে যায়নি। যদিও সোমবার দিবাগত রাতে ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু করা পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেন মঙ্গলবার ভোরে রাজশাহী এসেছে।”
মূল বেতনের সঙ্গে রানিং অ্যালাউন্স (ভাতা) যোগ করে পেনশন প্রদান এবং আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে জটিলতার নিরসন না হওয়ায় সোমবার মধ্যরাত থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। এতে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়েছে।
রাজশাহী রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, “কেন্দ্রীয় কমিটির অংশ হিসাবে রাজশাহীতেও ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। আমাদের অধিকার ফিরে না পাওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় কমিটি যখন কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবে, তখন ট্রেন চলবে।”
ময়মনসিংহ
মোহনগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী আন্ত:নগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনটি ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে রেখে পালিয়েছে চালক। এতে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খানকে দুই ঘন্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সোমবার মধ্যরাত থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেন বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই)। কর্মবিরতির মধ্যে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ছেড়ে আসে ঢাকাগামী আন্তঃনগর হাওর এক্সপ্রেস ট্রেন। পরে ট্রেন রেখে চালক পালিয়ে গেলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা নিরুপায় হয়ে স্টেশন সুপারকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রী জুবায়ের আহমেদ বলেন, ‘‘ফুপা অসুস্থ তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনে করে। কিন্তু ট্রেনটি মোহনগঞ্জ থেকে সকাল ৮টায় ছেড়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে সাড়ে ১০টার দিকে পৌঁছালেও ঢাকার উদ্দেশ্য যাচ্ছে না। ট্রেনটি রেখে চালক পালিয়েছে, তাই সকলে স্টেশন সুপারকে অবরুদ্ধ করে রাখে।’’
আরেক যাত্রী হাসানুল হক বলেন, ‘‘ঢাকা যাবে না ভালো কথা তাহলে মোহনগঞ্জ থেকে কেন ছাড়ল।’’
ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, ‘‘যাত্রীরা আমাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে, আমি কোন উপায় খোঁজে না পেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কে জানাই। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি স্থিতিশীল করে। টিকিটের টাকা ফেরত দিলে পরে যাত্রীরা চলে যায়।’’
নারায়ণগঞ্জ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি পাইকারি আড়তের দখল নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় পক্ষের ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ চলাকালে ১১টি যানবাহন অগ্নিসংযোগ করা হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সকাল সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার সাওঘাট এলাকায় সংঘর্ষ হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (গ-সার্কেল) মো. মেহেদী ইসলাম বলেন, “দুই পক্ষের সংঘর্ষে কয়েকজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে শুনেছি। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যবসায়ী জানান, সাওঘাট এলাকায় বিসমিল্লাহ আড়তের দখল নিয়ে সেলিম প্রধান ও মজিবুরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে। বিষয়টি নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কয়েকদিন আগে দুই পক্ষের লোকজনকে ডেকে আড়ত থেকে টাকা তুলতে নিষেধ করেন।
আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মজিবুরের লোকজন সেলিম প্রধানের অফিসের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। এসময় সেলিমের লোকজন তাদের লক্ষ্য করে ইট, ককটেল ও গুলিবর্ষণ করে। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে স্বপন, রাজু, আলামিন, বাবু, রফিক ও সাগর নামে ছয়জন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২৫ জন আহত হন। পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষের সময় সেলিম প্রধানের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরসহ ১০টি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার আগুনে পুড়িয়ে দেয় প্রতিপক্ষের লোকজন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহতদের ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করে। রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ঘটনাস্থল থেকে ১১টি গুলির খোসা ও একটি তাজা ককটেলসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সাইফুল ইসলাম বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে।”
যশোর
ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের কর্মবিরতির কারণে যশোরের পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে।
শ্রমিক নেতাকে গ্রেপ্তারের পর তিনদিন ধরে চলা এ ধর্মঘটে দুদিন তেমন কোনো সংকট না হলেও সকাল থেকে পাম্পগুলো গ্রাহকদের জ্বালানি তেল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। অনেক স্থানে পাম্প বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
খুলনা বিভাগীয় ট্যাংক লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আলী আজমকে রোববার দুপুরে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। এরপর থেকে কর্মবিরতি পালন করছে সংগঠনটি। তিনটি ডিপো থেকে জ্বালানি তেল উত্তোলন বন্ধ থাকায় যশোর-খুলনাসহ ১৫ জেলায় সরবরাহও বন্ধ রয়েছে।
যশোরের ফিলিং স্টেশনের কর্মকর্তারা জানান, সকালের মধ্যে ডিজেলের মজুত এত পরিমাণে কমে এসেছে যে, বিক্রয় বন্ধ রাখা হয়েছে। গণপরিবহণগুলো ছাড়া খুব কম যানবাহনের কাছে ডিজেল বিক্রি করা হচ্ছে।
বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায়, ডিজেল না পেয়ে অনেক পরিবহন ফিরে যাচ্ছে। তবে দুপুর পর্যন্ত পেট্রোল ও অকটেন বিক্রি স্বাভাবিক ছিল।
যাত্রিক ফিলিং স্টেশন সার্ভিসের ব্যবস্থাপক আতাউল ইসলাম পলাশ বলেন, তারা ডিজেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। পেট্রোল ও অকটেনের যে অবস্থা তাতে হয়ত দুপুরের মধ্যে বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে।
মেসার্স মনির উদ্দিন আহম্মেদ ফিলিং স্টেশনের হিসাবরক্ষক হুমায়ুন কবীর দুপুর ১২টার দিকে জানান, এরই মধ্যে তারা তাদের পাঁচটি ডিজেল বিক্রির মেশিনের মধ্যে একটি বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। ট্যাংক লরির কর্মবিরতি অব্যাহত থাকলে একপর্যায়ে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রিও বন্ধ হয়ে যাবে।
জ্বালানি তেল পরিবেশক সমিতির সভাপতি সৈয়দ সাজ্জাদুল করীম কাবুল বলেন, তেল না পেয়ে অনেক ফিলিং স্টেশন বন্ধ হয়ে গেছে। যাদের বেশি মজুত করার সক্ষমতা আছে তারাই এখনও পর্যন্ত বিক্রি করতে পারছেন। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংকট তৈরি হবে।
ঢাকা/অনিক/শিয়াম/কেয়া/মিলন/পলাশ/মাসুদ/ইমন/বকুল