দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁরা দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ার বিষয়েও সমালোচনা করেছেন।

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে অংশ নিয়ে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা।  জামায়াতে ইসলামী, সিপিবি ও বাসদের কোনো নেতাকে এবি পার্টির এই কাউন্সিলে দেখা যায়নি।

এবি পার্টির কাউন্সিলে বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য এখন ঊর্ধ্বমূখী, এত বড় সংকটের মধ্যেও একটা সরকারি নির্দেশে যারা ১০০টা পণ্যের ওপর হঠাৎ করেই কর ও ভ্যাট বাড়িয়ে দিতে পারে, যারা টিসিবির ট্রাক সেল বন্ধ করে নিরন্ন-বুভুক্ষু মানুষের অন্ন জোগানোর পদ্ধতি বন্ধ করে দিতে পারে, বুঝতে হবে যে তারা খুবই থিওরিতে চলে। থিওরির চেয়ে বড় যে প্রাত্যহিক জীবন, সেই জীবন বোঝে না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মাহমুদুর রহমান মান্না আরও বলেন, ‘তারা অর্থনীতির ভালো ভালো সংজ্ঞা বোঝে, কিন্তু অর্থনীতি যে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার হিসাব–নিকাশ, সেটা বোঝে না। দৈনন্দিন জীবনে মানুষ বড় কষ্টে আছে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ সংস্কারেও আর আস্থা রাখবে না। আমরা সংস্কার চাই, একই সঙ্গে নির্বাচন চাই। যত তাড়াতাড়ি ও যোগ্যতার সঙ্গে সম্ভব সংস্কার করে নির্বাচন আয়োজন করা প্রয়োজন।’

অন্তর্বর্তী সরকার দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাদের। তিনি বলেন, এই সরকারকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এই বছরের মধ্যেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আসার সুযোগ দেওয়া যাবে না।

ভ্যাট, ট্যাক্স, দ্রব্যমূল্য ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম যেভাবে বাড়ানো হচ্ছে, তাতে পুরোনো ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি। তিনি সরকারকে বলেন, ফ্যাসিস্টরা যেভাবে দেশ চালিয়েছে, সেই কায়দায় দেশ চালাবেন না।

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক সরকারের উদ্দেশে বলেন, বাজার নিয়ন্ত্রণ ও জানমালের হেফাজত করে প্রয়োজনীয় সংস্কার করে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। সেখানে স্থানীয় সরকারের কথা আসছে কেন? আপনাদের অগ্রাধিকারের তালিকা ছোট করুন। না হলে পথ হারানোর ঝুঁকি থাকবে।

পরিকল্পনাহীন একটি ‘আনলিমিটেড’ সরকার জনগণ দেখতে চায় না বলে মন্তব্য করেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম/// সশরীর উপস্থিত না হলেও লিখিত শুভেচ্ছা বক্তব্য পাঠান। তাঁর সেই বক্তব্য পড়ে শোনান দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন। তিনি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবি করেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের অধীনে আর যেতে চাই না। নতুন সংবিধান চাই, গণপরিষদ নির্বাচন চাই। গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধান না হলে দেশ সংকটে পড়বে।

বেলুন উড়িয়ে এবি পার্টির এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের শহীদ কয়েকজনের পরিবারের সদস্যরা। শুরুতে পবিত্র কোরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। ছিল সাংস্কৃতিক পরিবেশনাও।

এবি পার্টির কাউন্সিলে আরও বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদউদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী অনুসারী পরিষদের সভাপতি শেখ রফিকুল ইসলাম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, এনপিপির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান, এনডিএমের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, এবি পার্টির নেতা আবদুল ওহাব মিনার প্রমুখ।

এ ছাড়া জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ সিফাতের বাবা কামাল হাওলাদার, আহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সিফায়েত হোসেন, শহীদ তামিমির বাবা মান্নান হোসেইন, শহীদ মো.

ফজলুর স্ত্রী সুরাইয়া, শহীদ জিসানের মা জেসমিন আক্তার, শহীদ বোরহানের ভাই আমানত উল্লাহ বাবুল, আহত মো. মেহেদী হাসান শুভসহ কয়েকজন এতে বক্তব্য দেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব

বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র‌্যাব। ইজতেমা এলাকাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিয়মিত টহল জোরদার ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করতে পর্যাপ্ত র‌্যাব সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে র‌্যাব হেডকোয়ার্টার থেকে জানানো হয়, সার্বিকভাবে সব ধরনের ঝুঁকি পর্যালোচনা করে সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি র‌্যাবও নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। 

রাজধানী ঢাকার সন্নিকটে তুরাগ নদীর তীরে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের জন্য আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশি মুসলমানসহ সারা দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক ধর্মপ্রাণ মুসলমান অংশগ্রহণ করে থাকেন। প্রতি বছর ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য দেশি-বিদেশি মুসল্লির আগমন ঘটে। 

এ বছর তিন ধাপে ৩ দিন করে ইজতেমা মোট ৯ দিন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথম ধাপে ৩১ জানুয়ারি থেকে ২ ফেব্রুয়ারি, দ্বিতীয় ধাপে ৩-৫ ফেব্রুয়ারি এবং তৃতীয় ধাপে ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। 

সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন বিশ্ব ইজতেমা আয়োজন নিশ্চিতে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতে র‌্যাব ফোর্সেস অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছে। 

র‌্যাব জানায়, সামগ্রিকভাবে আসন্ন বিশ্ব ইজতেমার নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর, র‌্যাব-১ সহ ঢাকাস্থ ৫টি ব্যাটালিয়ন আগামী ৩০ জানুয়ারি হতে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং ১৩ ফেব্রুয়ারি হতে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মোতায়েন থাকবে। ইজতেমা এলাকার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া র‌্যাব সদর দপ্তর হতে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হবে। 

ইজতেমা মাঠ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ইউনিফর্মে টহল বৃদ্ধি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পাশাপাশি সুইপিং টিম দ্বারা তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য র‌্যাবের স্পেশাল টিম, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং পর্যাপ্ত স্ট্রাইকিং ও রিজার্ভ ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমগ্র ইজতেমা ময়দান ঘিরে উঁচু ভবনসমূহে বাইনোকুলারসহ র‌্যাব সদস্য নিয়োগ এবং র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। 

এ ছাড়াও, র‌্যাব কর্তৃক ইজতেমাস্থলে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে সমগ্র ইজতেমা এলাকা মনিটরিং করা হচ্ছে। নৌ-পথে যে কোনো বিশৃঙ্খলা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রোধকল্পে চলমান টহলের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক নৌ-টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা রোধে তিন ধাপে আয়োজিত ইজতেমা মধ্যবর্তী সময়ে কঠোর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

ইজতেমা এলাকার আশপাশে উচ্ছৃঙ্খলতা, মাদকসেবন, ছিনতাই, পকেটমার, মলমপার্টি ইত্যাদির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিদেশি মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্য বিদেশি খিত্তা এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সতর্ক দৃষ্টি ও নজরদারি রাখা হয়েছে। 

মুসল্লিদের গাড়ি পার্কিং এলাকাসহ ইজতেমা এলাকায় অবৈধ টোল বা চাঁদা আদায় করতে না পারে, সে বিষয়ে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইজতেমামুখী যানবাহন ও যাত্রীদের তল্লাশির জন্য চেরাগআলী বাসস্ট্যান্ড, টঙ্গী কালীগঞ্জ রোড, উত্তরা নর্থ টাওয়ারের সম্মুখে এবং আশুলিয়া কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। 

ইজতেমা এলাকায় র‌্যাবের চিকিৎসাকেন্দ্র সার্বক্ষণিকভাবে সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। র‌্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক মেডিকেল টিম এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিকভাবে আগত মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা প্রদানে নিয়োজিত থাকবে। 

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের দিনে আগত ও ঘরমুখী মুসল্লিরা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেজন্য র‌্যাবের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা চলমান থাকবে। বিশ্ব ইজতেমা কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রাষ্ট্র ও ধর্মবিরোধী অপপ্রচার/গুজব রোধে র‌্যাবের সাইবার মনিটরিং টিম অনলাইনে নজরদারি অব্যাহত রাখছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট করতে কোনো ব্যক্তি/স্বার্থান্বেষী মহলের অপচেষ্টা/অপপ্রচার কঠোরহস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে র‌্যাব। 

এ ছাড়াও যে কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে র‌্যাবের সহযোগিতা পেতে টহল ইনচার্জ অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত র‌্যাব ব্যাটালিয়নকে অবহিত করণসহ র‌্যাবকে (র‌্যাব কন্ট্রোল রুমের হটলাইন নম্বরে মোবাইল: ০১৭৭৭৭২০০২৯) জানানোর জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা হয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/এনএইচ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মোহাম্মদপুরে অভিযানের মধ্যেই ঘটছে অপরাধ
  • ইজতেমায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে র‌্যাব
  • গণপরিষদ নির্বাচনসহ ১১ দফা বিপ্লবী পরিষদের
  • ‘ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ হাজার সদস্য’
  • বাসে বিএম কলেজছাত্রী লাঞ্ছিত, বাস শ্রমিক-শিক্ষার্থী পাল্টাপাল্টি হামলা ও ভাংচুর