‘জুলাইয়ের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের জন্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি সরকারকে আরও সময় দেবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর।

আজ শনিবার দুপুরে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর অধ্যাদেশ অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে একজন সাংবাদিক জানতে চান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির পক্ষ থেকে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে এ সময়ের মধ্যে সম্ভব না–ও হতে পারে। আরও সময় লাগতে পারে। এ অবস্থায় সরকারকে আরও সময় দেওয়া হবে কি না।

এর জবাবে আখতার হোসেন বলেন, সরকারের আশ্বাসে গত ৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ স্থগিত রাখা হয়। সরকারের তরফ থেকে আগের রাতে (৩০ ডিসেম্বর) আশ্বস্ত করা হয় যে সরকার সব রাজনৈতিক পক্ষ ও অন্যদের সঙ্গে বসে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করবে। পরদিন সরকারকে ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির কাজটি শেষ করতে আহ্বান জানানো হয়। তবে সরকার এখন পর্যন্ত তেমন কিছু জানায়নি।

আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্র সরকার দেবে না, সহায়তা করবে০৯ জানুয়ারি ২০২৫

সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করতে আহ্বান জানান আখতার হোসেন। আর যদি অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে (সরকার) জানানোর পর সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও তিনি জানান।

বাহাত্তরের সংবিধান নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানের প্রতি বাংলাদেশের কিছু রাজনৈতিক দলের অতি ভক্তি রয়েছে।

৩১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশ করতে চেয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। তাদের এ উদ্যোগ রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনার জন্ম দেয়। বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়, হঠাৎ ঘোষণাপত্রের বিষয়টি কেন সামনে আনা হলো, এর প্রভাব কী হবে। এমন প্রেক্ষাপটে ৩০ ডিসেম্বর রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের একটি ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণাপত্র প্রকাশের পরিবর্তে ৩১ ডিসেম্বর বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ‘মার্চ ফর ইউনিটি’ (ঐক্যের জন্য যাত্রা) নামে সমাবেশ করে।

আরও পড়ুনদেরির বিষয়ে ‘যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা’ দিতে হবে সরকারকে: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও নাগরিক কমিটি ৭ ঘণ্টা আগে

সেই সমাবেশ থেকে ঘোষণাপত্র প্রকাশের জন্য সরকারকে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম জানান, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে আলোচনা করতে যাচ্ছে সরকার। বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী জুলাই ঘোষণাপত্র ১৫ জানুয়ারির মধ্যে হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহফুজ আলম তখন বলেছিলেন, সরকার সবার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। এতে হয়তো কিছু সময় বৃদ্ধি হতে পারে, কিন্তু এটা খুব বেশি দেরি হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

ঐক্যের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রসর হতে পারব: আলী রীয়াজ

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, “শুধু সংস্কার কমিশনগুলোর প্রতিবেদন, মতামত বা সুপারিশমালায় যথেষ্ট নয়। রাজনৈতিক এবং গণতান্ত্রিক শক্তিসহ জনমানুষের ঐক্যের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রসর হতে পারব।” 

সোমবার (২৮ এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের আলোচনার শুরুতে তিনি এসব কথা বলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে পাঠানো হতে আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব তথ্য জানানো হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, “গত ৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করেছে, সে আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের দ্বার উন্মুক্ত করতে হবে। শুধু কাগজে আমরা কী লিখছি তা নয়, জনগণের প্রতি অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির মধ্য দিয়ে এ লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে।”

আরো পড়ুন:

সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় আব্দুল্লাহ আল নোমানের জানাজা অনুষ্ঠিত

‘জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ছাড়া গণতন্ত্র ও মানবিক মর্যাদা অর্জন অসম্ভব’

তিনি আরো বলেন, “ঐকমত্য কমিশনের লক্ষ্য হচ্ছে একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা। যার মাধ্যমে ক্ষমতার বিন্যাসের পরিবর্তন ঘটে এবং বাংলাদেশ তার সমস্ত সম্ভাবনা নিয়ে জাগ্রত হতে পারে।” 

এ সময় কমিশনের সদস্য হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরুর নেতৃত্বে ১০ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দলে সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন, সিনিয়র সহ-সভাপতি  ফারুক হাসান ছাড়াও আবু হানিফ, হাবিবুর রহমান রিজু, অ্যাডভোকেট খালিদ হোসেন, সাকিব হোসাইন, শাকিল উজ্জামান, ফাতেমা তুজ জোহরা রেসা ও মুনতাজুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

প্রথম পর্যায়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে উল্লেখিত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর সুনির্দিষ্ট মতামত জানাতে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।

ইতোমধ্যে সংস্কার বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ৩৫টি দলের কাছ থেকে মতামত পেয়েছে। গণঅধিকার পরিষদসহ এ পর্যন্ত ২০টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিয়েছে।

ঢাকা/এএএম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলী রীয়াজের সঙ্গে ইন্টারন্যাশনাল আইডিইএ পরিচালকের বৈঠক
  • ঐক্যের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে অগ্রসর হতে পারব: আলী রীয়াজ
  • ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ফ্যাসিবাদী সরকারকে পলাতে বাধ্য করেছে: আলী রীয়া
  • বাংলাদেশে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বাস্তবায়ন দরকার: তামাং
  • নির্বাচন ডিসেম্বরের পরে নিলে সেটার কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে: জোনায়েদ সাকি
  • জাতীয় ঐকমত্যের বিকল্প নেই
  • দুই মেয়াদ নয়, দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না
  • রাষ্ট্র সংস্কারের উদ্যোগ সব স্তরের মানুষের কাছ থেকে এসেছে: আলী রীয়াজ
  • রাষ্ট্রপতি ও সংসদের মেয়াদের বদল চায় না জামায়াত
  • রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার উদ্দেশ্য জাতীয় সনদ তৈরি করা: আলী রীয়াজ