জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পক্ষে জাতীয় নাগরিক কমিটি। সংগঠনটি মনে করে, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করার মতো পরিস্থিতি এখনই আছে। আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে সরকার তা শুরু করে যুগপৎভাবে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন (প্রক্রিয়া) চালাতে পারে।

রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যালয়ে আজ শনিবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আলাউদ্দিন মোহাম্মদ এ কথা বলেন। শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে শতাধিক পণ্যে শুল্ক-কর বাড়ানোর অধ্যাদেশ প্রত্যাহারের দাবি জানান জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন।

বর্তমানে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার বিষয়টি রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টি সামনে এসেছে গত বুধবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এক বক্তব্যের পর। ওই দিন প্রধান উপদেষ্টা জানিয়েছিলেন, অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার নির্বাচনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে। এদিন ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংকের (ইআইবি) ভাইস প্রেসিডেন্ট নিকোলা বিয়ার সাক্ষাৎ করতে এলে প্রধান উপদেষ্টা তাঁকে এ কথা বলেছিলেন।

এরপর গত বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছিলেন ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এটা (স্থানীয় সরকার নির্বাচন) নিয়ে অগ্রসর হতে পারব।’ তবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন জাতীয় নির্বাচনের আগে কি না, সে বিষয়ে তিনি সুনির্দিষ্ট কিছু বলেননি।

আজ সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকেরা স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান জানতে চাইলে তার জবাব দেন আলাউদ্দিন মোহাম্মদ। জন্মনিবন্ধন সনদ, মৃত্যুসনদের মতো মৌলিক সেবাগুলো বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকার কাঠামো একেবারেই ভেঙে পড়েছে। এ অবস্থায় এটি একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে বলে তাঁরা দেখেছেন। জাতীয় নাগরিক কমিটিও মনে করে জাতীয় নির্বাচনের আগেই নতুন নির্বাচন কমিশন তার সক্ষমতার পরিচয় দেবে। স্থানীয় পর্যায়ে জনপ্রতিনিধিদের জাতীয় রাজনীতির সঙ্গে আলাদা বিবেচনা করেই একটি শক্তিশালী স্থানীয় সরকার গঠন করার জন্যই নির্বাচন দরকার।

নির্বাচন প্রক্রিয়ার (শুরু করার) পরিস্থিতি এখনই আছে বলে মনে করে আলাউদ্দিন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, আগামী দুই-তিন মাসের মধ্যে তা শুরু করে যুগপৎভাবে স্থানীয় সরকার ও জাতীয় নির্বাচন (প্রক্রিয়া) চালাতে পারে সরকার।

সংসদের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনেরও প্রস্তুতি চলছেদলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিষয়ে অগ্রসর হতে পারব: উপদেষ্টা মাহফুজ আলমস্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে কোন দল কী ভাবছে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

সেতুধস ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন

সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ধলাই নদের তলদেশ থেকে বেপরোয়া ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে বালু আহরণের ফলে সৃষ্ট পরিবেশগত ও অবকাঠামোগত সংকট আজ আর সম্ভাব্যতা মাত্র নয়, বরং এটি এক সুস্পষ্ট ও আসন্ন বিপর্যয়ের সতর্কসংকেত। নদীর প্রাকৃতিক প্রবাহপথ এবং পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষায় যে ধলাই নদ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে, তার অস্তিত্বই আজ সংকটাপন্ন।

স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর লোভনীয় অভিযানে নদের তলদেশে চলমান অবৈধ খনন কার্যক্রম ধলাই সেতুর ভিত্তিমূল পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। এটি সরাসরি একটি রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো ধ্বংসের সম্ভাবনা নির্দেশ করে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’র (ধরা) পেশ করা স্মারকলিপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রশাসনিক নির্লিপ্ততা ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ের সুযোগে একটি সংগঠিত বালুখেকো চক্র নদীগ্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত রয়েছে। নদটি এখন কেবল প্রাকৃতিক সংস্থান লুণ্ঠনের ক্ষেত্র নয়, বরং এক বৃহত্তর অর্থে রাষ্ট্রীয় উদাসীনতার প্রতিচ্ছবিতে পরিণত হয়েছে।

নদতল থেকে বালু আহরণের ফলে নদের স্বাভাবিক প্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। এর ফলে নদতীর ভাঙন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর হ্রাস, প্রাণবৈচিত্র্যের বিনাশ, কৃষিজমির ক্ষয় এবং জনবসতিতে ভূপ্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ধলাই সেতুর অধস্তনভূমি থেকে বালু উত্তোলনের কারণে কেবল পরিবেশগত ভারসাম্য নয়, বরং সরাসরি সেতুর স্থায়িত্বও হুমকির মুখে পড়েছে। একটি সেতু ধ্বংস হলে সেটিকে কেবল আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির বিষয় হিসেবে নয়; বরং তা মানবিক বিপর্যয়, আর্থসামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রকট নিদর্শন হিসেবেও দেখা উচিত।

এই সংকট নিরসনে অগ্রাধিকারভিত্তিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। প্রথম ধলাই নদসহ সংশ্লিষ্ট নদীসমূহে সব ধরনের যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক বালু আহরণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে। খনন কার্যক্রমে নিয়োজিত গোষ্ঠীকে দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

এ ছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়ার আগে বাধ্যতামূলকভাবে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন সম্পাদন এবং তার ভিত্তিতে অনুমোদন প্রদানের বিধান কার্যকর করা উচিত। তদুপরি নদ রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে একটি সামাজিক প্রতিরোধ কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যা সচেতনতা ও স্বার্থরক্ষা—উভয় স্তরে কার্যকর হতে পারে।

ধলাই সেতু যদি ধসে পড়ে, তা কেবল একটি সেতুর পতন হবে না; তা হবে রাষ্ট্রের অবহেলা, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা এবং নীতিনির্ধারকদের দায়হীনতার এক প্রামাণ্য দলিল। অতএব পরিবেশ ও অবকাঠামোর সুরক্ষার্থে অবিলম্বে কার্যকর, আন্তরিক ও দূরদর্শী রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ দরকার। অন্যথায় ধলাইয়ের ধারার সঙ্গে দেশের নৈতিক পতনের স্রোতও বেগবান হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • এখনই বন্ধ হচ্ছে না ফেরি কপোতাক্ষ
  • সেতুধস ঠেকাতে এখনই ব্যবস্থা নিন