চ্যাপম্যানে লজ্জা এড়াল নিউজিল্যান্ড, মরা ম্যাচে বড় জয় শ্রীলঙ্কার
Published: 11th, January 2025 GMT
ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হার কত রানের, দলটির সর্বনিম্ন স্কোরই বা কত—এ সব নিয়ে গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছিল! ২৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কোনো দল ২১ রানে ৫ উইকেট হারালে সেটিই হওয়ার কথা। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে আজ শেষ পর্যন্ত রেকর্ড হয়নি। সিরিজের শেষ ম্যাচে ১৫০ রানে অলআউট হয়ে নিউজিল্যান্ড হেরেছে ১৪০ রানে। ওয়ানডেতে এর চেয়েও বেশি রানে ১৭টি ম্যাচ হেরেছে কিউইরা। তবে শ্রীলঙ্কার কাছে এর চেয়ে বেশি ব্যবধানে মাত্র একবারই হেরেছে দলটি।
১৮৯ রানের সেই হারটি ২০০৭ সালে এই অকল্যান্ডেই। সে দিন সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে ২৬২ রান তাড়া করতে নেমে ৭৩ রানে অলআউট হয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডেতে যেটি তাঁদের ঘরের মাঠে সর্বনিম্ন ও সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।
প্রথম দুই ম্যাচ জিতেই নিউজিল্যান্ড সিরিজ জয় নিশ্চিত করে ফেলেছিল। তাই আজকের ম্যাচটি ছিল দলটির জন্য নিছকই আনুষ্ঠানিকতার। সেই ম্যাচে লজ্জার হাত থেকে বাঁচায় নিউজিল্যান্ড নিশ্চিত মার্ক চ্যাপম্যানকে ধন্যবাদ দিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের ১৫০ রানের মধ্যে ৮১-তো করেছেন ওয়ানডাউনে নামা এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় ওভারে ওপেনার উইল ইয়াংয়ের বিদায়ের পর উইকেটে যাওয়া চ্যাপম্যান ফিরেছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৩০তম ওভারে। মহীশ তিকশানার তৃতীয় শিকার হওয়ার আগে ১০ চার ও ১ ছক্কায় সাজিয়েছেন ৮১ বলের ইনিংসটিকে। নিউজিল্যান্ডের জার্সিতে এটি তাঁর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস।
চ্যাপম্যান ছাড়া নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংক্রমের প্রথম ছয়ের বাকি পাঁচজন মিলে করেছেন মোটে ৩ রান! ওপেনার ইয়াং, উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান টম ল্যাথাম ও অলরাউন্ডার গ্লেন ফিলিপস ফেরেন শূন্য রানে। আরেক ওপেনার রাচিন রবীন্দ্র ১ ও চারে নামা ড্যারিল মিচেল করেছেন ২ রান।
সাতে নামা মাইকেল ব্রেসওয়েল যখন ফিরলেন নিউজিল্যান্ডের স্কোর ৪৮/৬। চ্যাপম্যান এরপর অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনারকে নিয়ে সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ২৯ রান। যে জুটিতে স্যান্টনারের অবদান মাত্র ২ রান। স্যান্টনারের বিদায়ের পর নাথান স্মিথকে নিয়ে ৫১ রানের জুটি গড়েন চ্যাপম্যান। ১৭ রান করা স্মিথের পর নামা ম্যাচ হেনরি ৬ বলে করেন ১২ রান।
শ্রীলঙ্কার তিন বোলার আসিতা ফার্নান্ডো, মহীশ তিকশানা ও ঈশান মালিঙ্গা ৩টি করে উইকেট নিয়েছেন। তবে নিউজিল্যান্ডের প্রথম ৫ উইকেটের ৩টিই তুলে নেওয়া পেসার আসিতার হাতেই উঠেছে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
এর আগে ৮ উইকেটে ২৯০ রান তোলে শ্রীলঙ্কা। ৪২ বলে সর্বোচ্চ ৬৬ রান করেছেন পাতুম নিশাঙ্কা। ৫টি ছক্কা ও ৬টি চার মেরেছেন এই ওপেনার। এ ছাড়া ফিফটি পেয়েছেন কুশল মেন্ডিস (৪৮ বলে ৫৪) ও জানিত লিয়ানাগে (৫২ বলে ৫৩)। ৪ রানের জন্য ফিফটি পাননি কামিন্দু মেন্ডিস।
নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি ৫৫ রানে নিয়েছেন ৪ উইকেট। তিন ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে সিরিজসেরা হেনরি।
সংক্ষিপ্ত স্কোরশ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৯০/৮ (নিশাঙ্কা ৬৬, কুশল মেন্ডিস ৫৪, লিয়ানাগে ৫৩, কামিন্ডু মেন্ডিস ৪৬; হেনরি ৪/৫৫, স্যান্টনার ২/৫৫)।নিউজিল্যান্ড: ২৯.
৪ ওভারে ১৫০ (চ্যাপম্যান ৮১, স্মিথ ১৭; আসিতা ৩/২৬, তিকশানা ৩/৩৫, মালিঙ্গা ৩/৩৫)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ১৪০ রানে জয়ী।
সিরিজ: ৩-ম্যাচ সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-১ ব্যবধানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: আসিতা ফার্নান্ডো
ম্যান অব দ্য সিরিজ: ম্যাট হেনরি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গা-ছাড়া ক্রিকেটে ডুবল আশার সূর্য
পূর্বে উদিত সূর্যের কড়া তাপের দিনে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে নতুন কিছু শুরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল দল। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ২৫ বছরে যা গড়ে উঠেনি টেস্ট সংস্কৃতি, সেটাই নতুন করে শুরুর ঘোষণা মিলেছিল অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর কণ্ঠে।
আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেল্ফ ক্রিকেট থেকে বেরিয়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিপক্ষ জিম্বাবুয়ে হোক বা দক্ষিণ আফ্রিকা, এক দাঁড়িপাল্লায় মেপে প্রতিটি বল বুক চিতিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু ২২ গজে দেখা মিলল গা-ছাড়া ক্রিকেটের। তাতে টেস্ট সংস্কৃতি গড়ে তোলার যে অভিপ্রায় তা ভেস্তে গেছে প্রথম সুযোগে।
নিবেদনে প্রবল ঘাটতি, হতশ্রী ব্যাটিং প্রদর্শনী ও লড়াইয়ের জেদের অভাব। তাতে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম দিনটি জিম্বাবুয়ে নিজেদের করে নিয়েছে। সময় যত গড়িয়েছে, মধ্য গগন থেকে সূর্য পশ্চিমে যতটা হেলেছে বাংলাদেশের সম্ভাবনার সূর্যও ডুবেছে অতলে।
আরো পড়ুন:
অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি
সিলেট ও চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট
টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত দিয়ে মাত্র ১৯১ রানে অলআউট বাংলাদেশ। ধারহীন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে জবাব দিতে নেমে জিম্বাবুয়ে কোনো উইকেট না হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৬৭ রান তুলে রাঙিয়েছে প্রথম দিন। ১০ উইকেট হাতে রেখে দিন শেষ করার স্বস্তিতে মুখে চওড়া হাসি অতিথি শিবিরে।
সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যর্থতার গল্পগুলো একই রকম। ব্যাটিং ব্যর্থতায় হতাশার সমুদ্রে হারিয়ে যাওয়া। বোলিংয়ে শেষ কয়েক বছর লড়াই করলেও ব্যাটিং মাথা ব্যথার কারণ। কালেভাদ্রে হাসে ব্যাট। বেশিরভাগ সময়ই থাকে আড়ালে। সিলেটের ২২ গজে আজকের দিনটা ছিল তেমনই।
যদিও বোলারদের এখানে ক্রেডিট দেওয়ার সুযোগ সামান্য। জিম্বাবুয়ের বোলাররা আহামরি বোলিং করেননি যে বাংলাদেশ ৬১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ফেলবে। অতীত রেকর্ডও বিশ্রী। এই টেস্টের আগে অলআউট হওয়া দশ ইনিংসের মধ্যে ছয়টিতেই দুইশ ছুঁতে পারেনি।
যার শুরুটা ওপেনিং জট থেকে। সবশেষ ৩১ ইনিংসে উদ্বোধনী জুটিতে কোনো সেঞ্চুরি আসেনি। এবার ৩১ রানেই উদ্বোধনী জুটিতে ফাটল। সাদমান স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরার ১ রান পরই মাহমুদুল হাসান জয় উইকেটের পেছনে তালুবন্দি হন। প্রথম সেশনে আর কোনো বিপদ বাদেনি। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনেই সব ওলটপালট। উইকেট আহামরি কঠিন ছিল না। ব্যাটিংয়ের জন্য সহজ ছিল। জিম্বাবুয়ের বোলাররাও আহামরি বোলিং করেননি যে ব্যাটিংয়ে ধস পড়বে।
আত্মঘাতি শটে উইকেট উপহার দিয়ে না আসলে ব্যাটসম্যানদের আউট করা কঠিন ছিল। অতিথিদের জন্য কাজটা সহজ করে দেন অধিনায়ক শান্ত (৪০), মুশফিকুর (৪), মুমিনুল (৫৬) ও মিরাজ (১)। তাদের পথ অনুসরণ করেন তাইজুল (৩)। ৪৮ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।
সেখান থেকে তুলে দাঁড়ানোর শক্তি লেজের ব্যাটসম্যানদের ছিল না। জাকের আলীর ২৮, হাসান মাহমুদের ১৯ রান স্কোরবোর্ড কিছুটা সমৃদ্ধ করে। ওতোটুকুই যা লড়াই। টেস্টে স্কোরবোর্ড সমৃদ্ধ করে ব্যাটিং জুটি। শুরুর দুই ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরার পর তৃতীয় উইকেটে মুমিনুল ও শান্ত ১২৮ বলের জুটি গড়েছিলেন। ৬৬ রান আসে তাদের জুটিতে। যা দলের পক্ষে ছিল সর্বোচ্চ। বাকিটা সময়ে কেবল ছিল আসা-যাওয়ার মিছিল।
একই উইকেটে জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা ১৪.১ ওভার খেলার সুযোগ পেয়েছিল। ব্রেইন বেনেটের ৩৭ বলে ৬ চারে সাজানো ৪০ ও বেন কারানের ৪৯ বলে ১৭ রানের জমাট ৬৭ রানের জুটি অবাক করেছে সবাইকেই। শেষ বিকেলে চার বোলার ব্যবহার করেও কোনো সাফল্য মেলেনি। তাতে দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একচ্ছত্র আধিপত্য ধরে দিনটা নিজেদের করে নিয়েছে অতিথিরা।
ব্যাকফুটে থাকা বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিন ফিরতে না পারলে টেস্টের প্রথম ইনিংসেই ম্যাচের এপিটাফ লিখে নিয়েছে ধরে নেওয়াই যাবে।
ঢাকা/আমিনুল