জয়পুরহাট সদর থানা থেকে লুট হওয়া ১৪ অস্ত্র ও ১১০০ গুলি পাঁচ মাসেও উদ্ধার হয়নি
Published: 11th, January 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত ৫ আগস্ট জয়পুরহাট সদর থানার অস্ত্রাগার থেকে লুট হওয়া ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও প্রায় ১ হাজার ১০০ গুলির এখনো হদিস পাওয়া যায়নি। তবে জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব বলেছেন, তাঁরা থানার লুট হওয়া অস্ত্রগুলো উদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন।
জেলা পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর ওই দিন সন্ধ্যায় বিক্ষুব্ধ লোকজন জয়পুরহাট সদর থানায় হামলা করেন। এ সময় ওসিসহ অন্য পুলিশ সদস্যরা থানায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এসে অবরুদ্ধ পুলিশ সদস্যদের থানা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেন। এ সময় গুলিতে মেহেদি নামের এক যুবক নিহত হন। বিক্ষুব্ধ লোকজন থানার ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও লুটপাটের পর আগুন ধরিয়ে দেন। ওই দিন থানার অস্ত্রাগার থেকে ৫১টি আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। এ পর্যন্ত মোট ৩৭টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার র্যাব-৫ জয়পুরহাট ক্যাম্পের সদস্যরা সদর উপজেলার খঞ্জনপুর ঝাউবাড়ি এলাকা থেকে রাইফেলের এক ডজন গুলি উদ্ধার করে। এসব গুলি থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া গুলিগুলো জয়পুরহাট সদর থানা থেকে লুট করা হয়েছিল। কেউ গুলিগুলো লুকিয়ে রেখেছিল। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহেদ আল-মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ৫ আগস্ট থানার অস্ত্রাগার ভেঙে আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করা হয়। লুট হওয়া বেশির ভাগ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ১ হাজার ১০০ গুলি উদ্ধার করা যায়নি। ওই ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৬টি থানা-পুলিশের ও ৮টি জনগণের। আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।
পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, থানার লুটের পাঁচ মাস হচ্ছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ আগ্নেয়াস্ত্র পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। অর্থাৎ যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্রগুলো নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁরা নিজেরাই বিভিন্ন স্থানে রেখে গেছেন। তাঁরাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অথবা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকে জানিয়েছেন। সেই অস্ত্রগুলো উদ্ধার হয়েছে। এত দিনেও অবশিষ্ট আগ্নেয়াস্ত্র যাঁরা ফেরত দেননি, তাঁদের উদ্দেশ্য ভালো নয়।
তবে জয়পুরহাট জেলা পুলিশের দায়িত্বে যোগদানের পর থেকেই সদর থানার লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে জোর দিয়েছেন বলে দাবি করেন এসপি মুহম্মদ আবদুল ওয়াহাব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেখানে গিয়েছি, সেখানে লুট হওয়া অস্ত্রের কথা বলেছি। এখনো ১৪টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা যায়নি। এর মধ্যে পুলিশের পাঁচটি পিস্তল ও একটি চায়না রাইফেল রয়েছে। পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্রগুলো উদ্ধারের সর্বাত্মক চেষ্টা করছে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সলেমানের সোলার পাম্পে উপকৃত ১১০০ কৃষক, সাশ্রয় একরে ৪০০০ টাকা
কৃষির উপকরণ হচ্ছে বীজ, সেচ ও সার। তার মধ্যে অন্যতম উপকরণ সেচ। দেশের সেচ ব্যবস্থা ডিজেল ও বিদ্যুৎ নির্ভর। কিন্তু এই দুই ব্যবস্থার থেকে কম খরচ ও পরিবেশবান্ধব সোলার প্যানেল দিয়ে তৈরি করা সেচ পাম্প দিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ঠাকুরগাঁওয়ে ১১০০ বোরো ধান চাষি। এতে কৃষকের একরপ্রতি সাশ্রয় হচ্চে ৪ হাজার টাকা। শুধু টাকায় নয়, সোলার সেচ পাম্পে নেই কোনো শব্দ, নেই জ্বালানি খরচসহ কোনো রকম ঝামেলা। আর এটি সম্ভব করেছেন সলেমান আলী নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা।
সদর উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের মো. সলেমান আলী। ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ পাম্প তৈরি করে এলাকায় সাড়া ফেলার পাশাপাশি অর্জন করেছেন সুনাম। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে শুরু করেন সোলার নিয়ে সেচ। দীর্ঘ বছরের পরিশ্রম ও চেষ্টার ফলে ২০১৪ সালে তৈরি করেন ব্যাটারিবিহীন সোলার সেচ পাম্প। ২০১৫ সাল থেকে সোলার দিয়ে তিনি স্থানীয় কৃষকদের সেচ সুবিধা দিয়ে আসছেন। বর্তমানে তার ২৫০০, ২৬০০, ৩৩০০ ওয়ার্ডসহ মোট ২৬টি সোলার প্যানেল ও পাম্প রয়েছে। যার মধ্যে ৬টি পাম্প দিয়ে তিনি নিজে কৃষকদের সেচ সুবিধা দেন। বাকি পাম্পগুলো তিনি মৌসুমভিত্তিক ৩৬ হাজার টাকায় ভাড়া দিয়েছেন।
বর্তমানে তার তৈরি করা সোলার সেচ পাম্প দিয়ে সেচ সুবিধা নিয়ে উপকৃত হচ্ছেন ১১০০ কৃষক। এতে এবার প্রায় ৮ লাখ টাকা আয় করার আশা করছেন সলেমান আলী। গত বছর আয় করেছিলেন ৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা। একেকটি সোলার প্যানেলসহ পাম্প তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বলে জানান সোলার সেচ পাম্প উদ্ভাবনকারী উদ্যোক্তা সলেমান আলী।
আরো পড়ুন:
গাজীপুরে বজ্রপাতে প্রাণ গেল ২ কৃষকের
কৃষি জমিতে ‘বোমা বিস্ফোণ’, কৃষক আহত
স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, শ্যালোমেশিন ও বৈদ্যুতিক পাম্প দিয়ে সেচ দিতে অনেক বেশি খরচ হয় ও প্রয়োজনের সময় বিদ্যুৎও থাকে না। শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ দিতে একর প্রতি খরচ ১০ হাজার আর সোলারে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। এতে খরচ কম ও ঝামেলামুক্ত। এছাড়াও মাটির অভ্যন্তরীণ পাইপ স্থাপন করায় ড্রেনের ঝামেলা নেই এবং ড্রেনের সেই জায়গায় তারা আবাদ করতে পারছেন। এতে ফসল ভালো ও বেশি হচ্ছে। সলেমানের সোলার সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক উপকৃত হচ্ছেন তারা।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লালাপুর শুকানি গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ‘‘আমি সলেমান আলীর সোলার সেচ পাম্প দিয়ে গত চার বছর ধরে ফসলে পানি নেই। এতে বিশেষ করে মানুষ থাকার কোনো প্রয়োজন হয় না। আর শ্যালোমেশিন দিয়ে পানি নিলে তেল কিনতে হয় ও মেশিন আনা নেওয়া করতে কমপক্ষে দুইজন মানুষ লাগে ও পরিশ্রম হয় বেশি। আর আগে একর প্রতি মেশিনের পানি নিতে বর্তমানে লাগে ১০ হাজার টাকা। আর সোলার সেচ দিতে লাগে ৬ হাজার টাকা। এতে আমাদের অনেক খরচ ও পরিশ্রম কম হয়।’’
একই উপজেলার কালমেঘ বাজার এলাকার কৃষক মো. নূর ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের এইদিকে সোলার পাম্প দেওয়ার পর থেকে কৃষকদের খুবই উপকার হয়েছে। আগে ডিজেলচালিত মেশিনের মাধ্যমে আমাদের পানি নিতে কষ্ট হতো ও খরচ বেশি হতো। সলেমান ভাই সোলার নিয়ে আসাতে আমরা খুব সহজেই বোরো ধান ক্ষেতে পানি দিতে পারছি। পানি দিতে আমাদের ক্ষেতে আসতেও হয় না। শুধু সকালে সোলার পাম্প একবার চালু করে দিলে সারা দিন এমনিতে পানি হয়ে যায়। আর বিকাল ৫-৬টার দিকে সেটি অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়।’’
সদর উপজেলার মোলানি গ্রামের কৃষক মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘সোলারের মাধ্যমে এক ঘণ্টায় বোরো ধানের এক বিঘা জমিতে পানি হয়ে যায়। শ্যালোমেশিন ও ডিপ-টিউবওয়েলের মাধ্যমে আমাদের পানি নিতে ড্রেন করতে হতো। এতে পানির চাপে অনেক সময় মাটির ড্রেন ভেঙে যেত। এখন সলেমান চাচা মাটির নিচ দিয়ে পাইপ পুতে দিয়েছে। যার ফলে আমাদের আর ড্রেন করতে হয় না ও ড্রেনের যে জায়গাটি পড়ে থাকতো সেটিতে ধান করতে পারছি। এতে আমাদের ধানের ফলনও বেশি হচ্ছে।’’
আরো অনেক কৃষক সলেমানের মাধ্যমে উপকৃত হতে পেরে তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
সলেমান আলী জানান, তিনি তার বাড়িতে লাইট, ফ্যান, টিভি, ফ্রিজসহ মাছের ও মুরগির খামারে বিদ্যুতের যাবতীয় কাজ সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে চালান। তার এই প্রযুক্তি দেশে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান। তাহলে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সাশ্রয়, পরিবেশ দুষণ রোধ ও দেশ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম বলেন, সলেমান আলীর এই উদ্ভাবন কৃষিক্ষেত্রে আর্শীবাদ স্বরূপ। শুধু এই জেলায় নয়, দেশের বিভিন্ন জেলাসহ সুনামগঞ্জ পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে তার এই উদ্ভাবন প্রযুক্তি। সোলার সেচ পাম্প দিয়ে জেলার প্রায় ৭ হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছেন। তার এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানকার কৃষকরা সাশ্রয় মূল্যে, প্রয়োজন ও সাধ্যমতো সেচ দিতে পেরে লাভবান হচ্ছেন। ফলে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ কম হচ্ছে।
সলেমানের এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন এবং কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করা হবে জানান উপপরিচালক মো. মাজেদুল ইসলাম।
ঢাকা/বকুল