রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আউচপাড়া ইউনিয়নের রক্ষিতপাড়া গ্রামের বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা শরিফা বিবি (৩৩) পাঁচ মাস ধরে সরকারের দেওয়া মাতৃত্বকালীন ভাতার টাকা পাচ্ছেন না। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কোনো খুদে বার্তাও আসে না। হতাশ হয়ে নবজাতক কোলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে যান। ভাতা না পাওয়ার কথা জানালে ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা প্রয়োজনীয় তথ্য নিয়ে অনলাইনের সার্ভারে ঢুকে দেখতে পান, শরিফার হিসাব নম্বরের জায়গা অন্য একটি নম্বর। মাসিক ভাতার টাকা ওই অপরিচিত নম্বরে পাঠানো হয়েছে। 

শুধু শরিফা বিবির নন, বাগমারা উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার মায়ের সরকারি ভাতার টাকা প্রতারকের কাছে চলে গেছে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তর ‘মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচি’র আওতায় অন্তঃসত্ত্ব নারীদের জন্য মাসিক ভাতা চালু করে। প্রতি মাসে ৮০০ টাকা করে এই ভাতা দেওয়া হয়। সুবিধাভোগী নারীরা মুঠোফোনের আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদ, রকেট ও বিকাশের মাধ্যমে ভাতার টাকা পেয়ে থাকেন।

উপজেলার আউচপাড়ার বাসিন্দা রোকসানা খাতুন (৩১) প্রথম আলোকে বলেন, নিজের গ্রামীণফোন নম্বরে বিকাশ হিসাব চালু করেছিলেন। কয়েক মাস ওই হিসাবে ভাতার টাকাও এসেছিল। একনাগাড়ে তিন মাস ভাতা না আসায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানের সহায়তায় উদ্যোক্তার মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, তাঁর ভাতার টাকা চলে গেছে অজানা একটি রবি নম্বরে।

উপজেলা মহিলাবিষয়ক দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মাসে ৯৮ জন অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নতুন করে ভাতার আওতায় আনা হয়। এর মধ্যে ১৬টি ইউনিয়নের ৮০ জন এবং দুটি পৌরসভার ১৮ জন তালিকাভুক্ত হন। বর্তমানে বাগমারার মোট ৫ হাজার ৩৯৩ জন নারী মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধা ভোগ করছেন।

তিন সপ্তাহ ধরে উপজেলার সব কটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কিংবা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় আড়াই হাজার ভাতাভোগীর হিসাব নম্বর পরিবর্তন করে টাকা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ আউচপাড়া ইউনিয়নের ৩১৭ জনের হিসাব নম্বর পরিবর্তন করে ভাতার টাকা সরানো হয়েছে। তবে প্রতারকদের সরিয়ে নেওয়া মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করে সব কটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

আউচপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এম সাফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকারি লোকজন যাঁরা ওই দপ্তরের প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তাঁরাই এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। প্রতারিত সুফলভোগীদের টাকা ফেরতের ব্যবস্থাসহ জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

৩০-৪০ জন উপকারভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি মাসে তাঁদের হিসাবে (মুঠোফোন নম্বরে) ভাতার ৮০০ টাকা আসে। পরে স্থানীয় পরিবেশকদের কাছে গিয়ে টাকা তুলে নেন। এই টাকা নিজের পুষ্টিকর খাবার ও নবজাতকের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার কাজে ব্যয় করেন। অনেকে শিশুসন্তানের খাবারও কেনেন ভাতার এই টাকায়। তবে কয়েক মাস ধরে অনেকেই টাকা পাচ্ছেন না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, টাকাগুলো অন্য নম্বরে চলে যায়, যে নম্বরটি তাঁরা সরবরাহ করেননি। 

অভ্যাগতপাড়া গ্রামের গৃহবধূ জহুরা বিবি (৩৪) বলেন, তিনি বাংলালিংক নম্বরে নগদের হিসাব চালু করে তা দিয়ে ভাতার জন্য আবেদন করে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। অথচ তাঁর ভাতার টাকা চলে যায় একটি গ্রামীণফোন নম্বরে, যেটিতে নগদের হিসাব চালু আছে। ওই নম্বরটি তাঁর নয়।

প্রতারিত নারীরা অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয়ভাবে এই অনিয়ম করা হয়। একমাত্র অধিদপ্তর ছাড়া হিসাব নম্বর পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। তাঁদের ভাষ্য, ভাতার টাকা আসার আগমুহূর্তে হিসাব নম্বর পরিবর্তন করা হয়। টাকা ওই প্রতারকদের হিসাবে চলে যাওয়ার পরেই আবার সুবিধাভোগীর হিসাব নম্বর দেওয়া হয়।

সুবিধাভোগীদের টাকা অন্য নম্বরে যাওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন বাগমারা উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে উপজেলার ১ হাজার ৪৬৮ জনের টাকা সরিয়ে নেওয়ার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয় দপ্তরকে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ ঢাকায় মেইল পাঠানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: পেঁপে ছাড়া ৫০ টাকার নিচে নেই কোনো সবজি

সরবরাহ কমের অজুহাতে বাজারে সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। অধিকাংশ সবজি কিনতে গুণতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। সেই সঙ্গে দাম বেড়েছে মাছেরও। এতে অস্বস্তিতে পড়ছেন ক্রেতারা।

কয়েকজন ক্রেতা জানান, শীত মৌসুমের সবজি নিয়ে যে স্বস্তি ছিল, তা এখন আর নেই। বাজারে বেশিরভাগ সবজির দাম ৬০ টাকার ওপরে। কোনো কোনটির দাম একশো পেরিয়েছে।

শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পটল, ঢ্যাঁড়স, ঝিঙা, চিচিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এর চেয়ে কমে শুধু পেঁপে পাওয়া যাচ্ছে, তাও ৫০ টাকা কেজিতে। এছাড়া, করলা, বেগুন, বরবটি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়।

সবচেয়ে বেশি দাম দেখা গেছে কাঁকরোলের। গ্রীষ্মকালীন এই সবজিটি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। সজনে ডাঁটা ১২০ থেকে ১৪০ টাকা।

তবে ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি পণ্যের দাম আগের মতোই আছে। পেঁয়াজের দামও কয়েক সপ্তাহ বেড়ে এখন ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় আটকে আছে।

এদিকে, মাছের বাজারেও বাড়তি দাম দেখা গেছে। মা ইলিশ সংরক্ষণে নদীতে মাছ ধরা বন্ধ ও চাষের মাছের সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। এর মধ্যে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ইলিশ ও চিংড়ির দাম।

মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি পিস ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দাম হাঁকা হচ্ছে। অন্যদিকে, প্রতিকেজি চাষের চিংড়ি ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, নদীর চিংড়ি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, স্বাভাবিক সময়ে এসব মাছের দাম কেজিতে ৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কম থাকে। এছাড়া কই, শিং, শোল, ট্যাংরা, চাষের রুই, তেলাপিয়া,পাঙাশ ও পুঁটি মাছও আগের চেয়ে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

ঢাকা/সুকান্ত/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ