মার্কিন শাস্তিমূলক পদক্ষেপের মধ্যেই তৃতীয় মেয়াদে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন মাদুরো
Published: 11th, January 2025 GMT
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন নিকোলা মাদুরো। টানা ছয় মাস ধরে নির্বাচনী বিবাদ, প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে যাওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক আহ্বান এবং তাঁকে আটক করতে যুক্তরাষ্ট্রের পুরস্কার বৃদ্ধি সত্ত্বেও শুক্রবার শপথ নেন তিনি। মাদুরোর প্রায় ১২ বছরের শাসনামলকে দেশটির গভীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকটের কাল হিসেবে ধরা হয়।
২০১৩ সাল থেকে নিকোলা মাদুরো ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট। গত বছরের জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশটির নির্বাচনী কর্তৃপক্ষ এবং শীর্ষ আদালত তাঁকে বিজয়ী ঘোষণা করে। যদিও তাঁর বিজয় নিশ্চিত করে ভোটের পুঙ্খানুপুঙ্খ ফল কখনোই প্রকাশ করা হয়নি।
ভেনেজুয়েলার বিরোধীরা বলেছেন, ব্যালট-বাক্সের ভোটের হিসাবে দেখা গেছে, নির্বাচনে ভূমিধস জয় লাভ করেছেন মাদুরোর বিরোধী প্রার্থী এদমুন্দো গনসালেস। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ তাঁকে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা বলেছেন, এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ছিল না।
নির্বাচন-পরবর্তী কয়েক মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে এদমুন্দো গনসালেসের স্পেনে পালিয়ে যাওয়া, তাঁর মিত্র মারিয়া করিনা মাচাদোর ভেনেজুয়েলায় আত্মগোপন করা এবং বিরোধী দলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আটক করা ও বিক্ষোভসহ নানা ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে একের পর এক শাস্তিমূলক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সবশেষ মাদক পাচারের অভিযোগে নিকোলা মাদুরোকে দোষী সাব্যস্ত বা গেপ্তার করতে তথ্য দেওয়ার জন্য পুরস্কারের পরিমাণ দেড় কোটি ডলার থেকে বাড়িয়ে আড়াই কোটি ডলার করেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী বাইডেন প্রশাসন। এ ছাড়া ভেনেজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিওসদাদো কাবেলোর জন্য আড়াই কোটি এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনোর জন্য দেড় কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি তেল কোম্পানি পিডিভিএসএ-এর প্রধান হেক্টর ওবরেগনসহ আট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে ২০২০ সালে মাদুরো এবং তাঁর প্রশাসনের অন্যান্যদের মাদক ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মাদুরো অবশ্য এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। একই সময়ে যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন দেশটির ১৫ জন করে ৩০ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর মধ্যে রয়েছেন জাতীয় নির্বাচনী পরিষদ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও। অন্যদিকে কানাডা দেশটির বর্তমান ও সাবেক ১৪ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
মাদুরো সরকার সব সময় এসব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এগুলো অবৈধ পদক্ষেপ, যা ভেনেজুয়েলাকে পঙ্গু করার জন্য ‘অর্থনৈতিক যুদ্ধে’র নামান্তর।
শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে নিকোলা মাদুরো সরাসরি নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ইংগিত না দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী সরকার জানে না কীভাবে আমাদের ওপর প্রতিশোধ নেবে।
ভেনেজুয়েলার যোগাযোগ মন্ত্রণালয় নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি।
মাদুরো এবং তার মিত্ররা পশ্চিমা এসব শাস্তিমূলক এই পদক্ষেপ সত্ত্বেও দেশটির স্থিতিস্থাপকতা নিয়ে উল্লাস করেছেন। যদিও তারা কিছু অর্থনৈতিক সমস্যা এবং সংকটের জন্য নিষেধাজ্ঞাকে দায়ী করেছেন।
এদিকে চলতি সপ্তাহে সংক্ষিপ্ত সফরে যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন বিরোধী নেতা এদমুন্দো গনসালেস। তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের জন্য ভেনেজুয়েলায় ফিরবেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি এ রাজনীতিক।
বিরোধীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদী ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনে ভেনেজুয়েলার বর্তমান সরকার বলেছে, এদমুন্দো গনসালেস ফিরে আসলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য তথ্য দিতে এক লাখ ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছে সরকার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইউক্রেনে জেলেনস্কির বিকল্প নেতা খুঁজছে যুক্তরাষ্ট্র!
ইউক্রেনে শান্তিচুক্তির জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির পদত্যাগ করা লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎস। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের একজন নেতা প্রয়োজন, তিনি আমাদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন। তিনি শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে কাজ করতে পারবেন এবং এই যুদ্ধ থামাতে পারবেন।’ খবর- সিএনএন
গণমাধ্যমের সামনেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির নজিরবিহীন বাগবিতণ্ডার পর এ কথা বললেন তিনি। বাগবিতণ্ডার এ ঘটনাটি নিয়ে নানা আলোচনা চলছে বিশ্বজুড়ে। ওই ঘটনার পর ইউক্রেনের খনিজ সম্পদ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে ঐতিহাসিক চুক্তি হওয়ার কথা ছিল, সেটিও বাতিল হয়ে যায়। আর এর পরই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা।
এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। শুক্রবারের ওই ঘটনায় সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের গড়া ওয়াশিংটন-কিয়েভ সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে। এই প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব ন্যাটোর ইউরোপীয় সদস্যদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যদিও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে আবারও এক টেবিলে বসার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেন ও রাশিয়া-দুই পক্ষই আলোচনায় না বসলে যুদ্ধ থামবে না। হোয়াইট হাউসে শুক্রবার ট্রাম্প-জেলেনস্কি বিতণ্ডার পর থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আর কথা হয়নি। যুদ্ধ থামানোর জন্য রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে আনতে হবে। তবে তাদের প্রতি বৈরী মনোভাব রাখলে, মস্কোকে আলোচনায় যুক্ত করা সম্ভব হবে না। কোনো চুক্তি করার ক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই মনোভাবই দেখিয়ে আসছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, সবকিছু আবার শুরু হতে পারে। আশা করি, তিনি (জেলেনস্কি) এটা বুঝতে পারবেন যে আমরা আসলে আরও হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর আগে, তাঁর দেশকে সাহায্যের চেষ্টা করছি।’