সারা দেশে এখন একটা হতাশা ও বিষণ্নতা বিরাজ করছে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। গত ৫ আগস্টের ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানকে মস্ত বড় ঘটনা মনে করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি

বলেন, ‘কিন্তু পরে দেখা যাচ্ছে যে এটা একটা সরকারের পতন মাত্র, ব্যবস্থার পতন নয়। ব্যবস্থা সেই আগের মতোই রয়ে গেছে এবং সে জন্য দেশে একটা হতাশা বিরাজ করছে, একধরনের বিষণ্নতা বিরাজ করছে।’

তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর ২৯তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে দশম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী এ কথা বলেন। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আরও বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্র বারবার বদল করেছি। বড় রাষ্ট্রকে ছোট রাষ্ট্র করেছি, কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। সমাজে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেনি। বলা হয়েছিল যে বিপ্লব ঘটেছে। বিপ্লব তো দেখা যাচ্ছে না। একটা সরকারের পতন হয়েছে মাত্র, ব্যবস্থা তো সব আগের মতোই রয়েছে।’

১৪২ মাস পার হলেও ত্বকী হত্যার বিচার হয়নি উল্লেখ করে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, এর দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ দেশে তরুণ এবং তারুণ্য নিরাপদে নেই। প্রমাণিত হয় যে এ দেশের বিচারব্যবস্থা এমন, যেখানে অপরাধীদের শাস্তি হয় না এবং অপরাধীরা ক্ষমতায় থাকে এবং নিশ্চিতে বিরাজ করতে থাকে সমাজের মধ্যে। তিনি বলেন, ‘আমরা কেবল বিচার চাই না। যে সমাজ বিচার করে না, যে সমাজ নিরাপত্তা দেয় না, যে সমাজ ত্বকীদের হত্যা করে, সেই সমাজকেই পরিবর্তন করতে হবে।’

ব্রিটিশ আমল, পাকিস্তান আমল, এমনকি স্বাধীন বাংলাদেশেও একসময় কিশোর আন্দোলন ছিল উল্লেখ করে এই শিক্ষাবিদ বলেন, এখন কিশোর আন্দোলন নেই। ত্বকীর মতো বই পড়া, আন্দোলনে যাওয়া, ছবি আঁকা, কবিতা লেখা তরুণেরা প্রাণ হারাচ্ছেন। অথবা জীবন্ত থেকেও টিকে আছে কোনোমতে। সেই ব্যবস্থাকে বদল করার জন্য তরুণদের সংগঠিত করা দরকার। সারা দেশে এখন একটা সাংস্কৃতিক জাগরণ তৈরি করা দরকার।

প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি

ত্বকীর মতো অসংখ্য হত্যাকাণ্ড এবং তার সঙ্গে লুণ্ঠন, সম্পদ পাচার, মানুষের ওপর অত্যাচার—এসব মিলে যে ক্ষোভ জমেছিল, তারই প্রকাশ দেখা গেছে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে। এ কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য আনু মুহাম্মদ। তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পরে স্বাভাবিকভাবেই সবার প্রত্যাশা যে এগুলোর বিচার করতে হবে। সেই প্রত্যাশা এখনো পূরণ হয়নি। বিচারকাজ সন্তোষজনকভাবে অগ্রসর হয়েছে, এটাও বলা যায় না।

স্বৈরশাসনের পতন হলেও খুনিদের পৃষ্ঠপোষকদের বিদায় হওয়ার কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। ক্ষমতাশালী দল কিংবা পুলিশ এখনো মামলা ও আটক–বাণিজ্য করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বৈরশাসনের পতনের পর এ প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কথা নয়, কিন্তু সেই প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। তিনি এর নিন্দা জানান।

আমরা রাষ্ট্র বারবার বদল করেছি। বড় রাষ্ট্রকে ছোট রাষ্ট্র করেছি, কিন্তু রাষ্ট্রের চরিত্রে কোনো মৌলিক পরিবর্তন আসেনি। সমাজে কোনো বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটেনি।অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

স্বৈরশাসন সময়কার বড় অপরাধীদের কয়েকজন বাদে সবাই বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় পালিয়ে গেছে উল্লেখ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা যেমন সরকারের দায়িত্ব, ঠিক সেভাবে যারা অপরাধী নন তাঁদের হয়রানি না করাটাও সরকারের দায়িত্ব। যাঁরা অপরাধী নন, তাঁদের হয়রানি করাটাও একটা অপরাধ।

সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের এখনো দরকার আছে বলে মনে করেন আনু মুহাম্মদ। কারণ, এখনো সন্ত্রাস চলছে। মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষকে অত্যাচার করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও খারাপ। খুন কমছে না।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। স্বাধীনতার পর কোনো সরকারই জনগণের পক্ষে ছিল না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর ফলে জনগণের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে না। রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেই পরিবর্তনের জন্য নতুন রাজনীতির প্রয়োজন।

নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। বিজয়ীদের মধ্যে কথা বলেন অশেষ লস্কর ও দেবাশ্রীতা পাল।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বরিশালে খেলবেন মিলনে, কবে যোগ দেবেন বিপিএলে 

বিপিএলে যোগ দিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডের পেসার অ্যাডাম মিলনে। তারকাসমৃদ্ধ ফরচুন বরিশালে খেলবেন তিনি। বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজি এক বার্তায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। 

মিলনে ৩ ফেব্রুয়ারি বরিশালের ক্যাম্পে যোগ দেবেন। ওই দিন বিপিএলের প্রথম কোয়ালিফায়ার মাঠে গড়াবে। যে ম্যাচে মাঠে নামবে বরিশাল। তাদের প্রতিপক্ষ হবে রংপুর রাইডার্স ও চট্টগ্রাম কিংসের মধ্যে একদল। 

সব ঠিক থাকলে মিলনে ওই ম্যাচে বরিশালের জার্সিতে মাঠে নামতে পারেন। এছাড়া বিপিএল ছেড়ে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলরাউন্ডার কাইল মায়ার্স ফিরছেন বরিশালের ক্যাম্পে।  

চলতি বিপিএলে সবার আগে কোয়ালিফায়ার নিশ্চিত করেছে ফরচুন বরিশাল। ১১ ম্যাচের ৯টিতে জিতেছে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন দলটি। 

বরিশাল গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে শনিবার চট্টগ্রাম কিংসের মুখোমুখি হবে। ওই ম্যাচে চট্টগ্রাম জিতলে দুই দল প্রথম কোয়ালিফায়ারে আবারো মুখোমুখি হবে। চট্টগ্রাম হারলে কোয়ালিফায়ার খেলবে রংপুর ও বরিশাল।     

সম্পর্কিত নিবন্ধ